কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। আমরা সকলেই ফল খায়। কিন্তু কোন ফল খেলে বা কিভাবে খেলে আমাদের শরীরের ও স্বাস্থ্য উপকার হবে এ বিষয়ে আমাদের কোন ধারণা নাই। কিসমিস এটা একটি প্রচলিত ফল।
এই ফলটা আমরা প্রায় সবাই খেয়ে থাকি। কিন্তু এই ফলে যে পুষ্টিগুণ আছে বা কিভাবে খেতে হবে সেটা আমরা জানি না। তাই আর্টিকেলে আমরা জানবো ভিজানো কিসমিস খাওয়ার যে দশটি উপকারিতা আছে তার সম্পর্কে। এবং অতিরক্ত খেলে এর কি অপকারিতা আছে সে বিষয়ে। চলুন তাহলে নিচে বিস্তারিত জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
- কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
- কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
- কিভাবে কিসমিস ভিজিয়ে খাবেন
- কিসমিসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
- কেন আমরা কিসমিস খাবো
- কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- বাচ্চাদেরকে কিসমিস খাওয়ানো যাবে
- কিসমিস ভিজিয়ে পানি খাওয়ার উপকারিতা
- FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
বর্তমান যুগের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া
উপায় নিজেদের শরীর ভালো রাখার চেষ্টা করছে। আর সে প্রাকৃতিক খাবার গুলোর
তালিকায় অন্যতম জনপ্রিয় নাম হলো কিসমিস। অনেকে শুধু কিসমিস খান আবার অনেকে
ভিজিয়ে খাওয়া কিসমিস পানি খাওয়ার অভ্যাস করেন কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা আসলে কি
উপকার হয়। আমরা জানবো কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া ১০ টি উপকারিতা যেগুলো আপনার শরীর
মন এবং জীবনযাত্রাকে ইতিবাচক ভাবে প্রবাহিত করতে পারে।
হজমশক্তি বাড়ায়ঃ কিসমিসে রয়েছে ফাইবার যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
ভিজানো কিসমিস খেলে তা আরো সহজে শরীরে শোষিত হয় এবং পাচনতন্ত্র সচল থাকে।
এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে
কার্যকর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে৫-১০ একটি ভেজানো কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করলে
হজমে সুস্থতা আসে।
রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করেঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
মধ্যে হল রক্তশূন্যতা বা অ্যানোনিয়া প্রতিরোধ করা। কিসমিস হলো প্রাকৃতিক আয়রনের
উৎস। ভিজিয়ে খাওয়া কিসমিস আয়রন সহজে শোষিত হয় শরীরে। এটি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে
সাহায্য করে এবং যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে
নারীদের জন্য এটা খুব ভালো একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসার উপায়।
শক্তি এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়কঃ কিসমিসে থাকে প্রাকৃতিক গ্লুকোজ যার
দ্রুত এনার্জি জোগায়। যারা সকালে ক্লান্তি ভাব বা অলসতা অনুভব করেন তারা ভি জানো
কিসমিস খেলে দিনের শুরুটা হবে প্রাণবন্ত ও চঞ্চল। এটি খেলোয়াড় স্টুডেন্ট এবং
কর্মজীবীদের জন্য চমৎকার একটি এনার্জি বুস্টার।
হার্টের সুস্থতা রক্ষা করেঃ ভিজানো কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট
অ্যাটাক বা স্টকে ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত ভিজন ও কিসমিস খেলে হার্ট সুস্থ ও সক্রিয়
থাকে।
আরো পড়ুনঃ
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
ত্বক উজ্জ্বল করে এবং বার্ধক প্রতিরোধ করেঃ কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা আনে। এছাড়া এটি
ত্বকের বলি রেখা ও বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত খেলে টক হয়ে উঠে কমল
মসৃণ এবং দীপ্তিময়।
হাড় গঠন মজবুত করেঃ কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে হার
গঠনের মজবুত করা। কিসমিসে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও বোরন যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত
প্রয়োজনীয় উপাদান। ভেজানো কিসমিস খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ হয় এবং
বয়স্কদের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি হতে পারে
প্রাকৃতিক হাড়ের টনিক।
লিভার ডিটক্স করে এবং শরীর পরিষ্কার রাখেঃ ভেজানো কিসমিস লিভার
পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরের জমে থাকা
বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। এটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসাবে কাজ করে
এবং পুরো শরীরকে রিফ্রেস করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করেঃ যদিও কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি থাকে তবে
ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে সেটা শরীরে ধীরে শোষিত হয়। এটা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা
অনুভব করায় ফলে কম খাওয়া হয়। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে যদি স্বাস্থ্যকর
খাদ্যভাসে অনুসরণ করেন।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ কিসমিসে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং বেটা ক্যারোটিন চোখের জন্য
উপকারী। এটি চোখে ক্লান্তি দূর করে এবং দীর্ঘমেয়াদী চোখের দৃষ্টি শক্তির রক্ষা
করে। মোবাইল বা কম্পিউটারে যারা বেশি সময় কাটান তারা প্রতিদিন ৫ থেকে সাতটি
ভিজানো কিসমিস খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও
অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস যার শরীরে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। এটি ভাইরাস,
ঠান্ডা, সর্দি কাশি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। শিশুদের ঠান্ডা সর্দি প্রবণতা
কমাতে সকালে ভিজানো কিসমিস খাওয়ানো যেতে পারে।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
ফল খাওয়া ভালো এটা আমরা জানি। কিন্তু অতিরক্ত খেলে সেটা শরীরও স্বাস্থ্যের জন্য
ভালো না। সেরকম হচ্ছে কিসমিস। কিসমিস একটি সুস্বাদু ফল। এটা খেতেও সুস্বাদু। এটা
খেলে শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কিসমিস খেলে শরীর ও স্বাস্থ্যের উপকার হয়
তেমনি অতিরিক্ত শরীরের কি কি অপকারিতা দেখা যায় চলুন তা নিজে আলোচনা
করি।
- অতিরক্ত কিসমিস খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ কিসমিসে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা এটি অতিরিক্ত খেলে ক্যালরি মাত্রা বেড়ে যায়।
- কিসমিসে রয়েছে প্রাকৃতিক সুগার যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যদি সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খাওয়া যায় তাহলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ করে বেড়াতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
- কিছু মানুষের জন্য কিসমিস গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিট বাড়াতে পারে। ভেজানো কিসমিস অতিরক্ত ফাইবার থাকার কারণে পেট ফাঁপা ঢেকুর উঠা বা এমনকি পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- কিছু মানুষের শরীরে কিসমিস থাকা কিছু প্রাকৃতিক যৌগ বা প্রিজারভেটিভের কারণে এলার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে যেমন চুলকানি, চামড়া ফুসকুড়ি, গলা চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট।
- অনেক সময় বাজারে পাওয়া কিসমিস সালফার ডাইঅক্সিড বা অন্যান্য কেমিকাল প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়াতে পারে, ফুসফুস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, লিভার বা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- কিসমিস প্রাকৃতিক সুগারের ভরপুর এবং ১৮ হওয়ায় দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকতে পারে যা দাতে ক্যাভিটি বা দাঁতের ক্ষয় তৈরি করতে পারে। কিসমিস খাওয়ার পর পানি পান করা এবং দাঁত পরিষ্কার রাখা জরুরী।
- কিছু মানুষ স্যালিসাইলেট নামক যৌগে সংবেদনশীল যা কিসমিসের প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারে। তাদের জন্য এটি মাথাব্যথা, বমি বা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
কিভাবে কিসমিস ভিজিয়ে খাবেন
সবার আগে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে ভালো কিসমিস। বাজারে অনেক ধরনের কিসমিস
পাওয়া যায়। কিন্তু ভালো খারাপ আমরা বুঝতে পারি না। তাই আপনাকে কেনার সময়
অবশ্যই এটা মাথায় রাখতে হবে এবং দেখে শুনে ভালো কিসমিস টা নিবেন। চলুন তাহলে
কিভাবে কিসমিস ভিজিয়ে খাবেন তা জেনে নিন।
- সঠিক কিসমিস নির্বাচন করুনঃ কিসমিস খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো কিসমিসটা নির্বাচন করুন। বাজারে দুই ধরনের কিসমিস পাওয়া যায়। ব্ল্যাক রাইস সিন (কালো কিসমিস)। এতে রয়েছে আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। আর অপরটির নাম হচ্ছে গোল্ডেন রাইসিন(হালকা হলুদ কিসমিস)। দেখতে সুন্দর কিন্তু অনেক সময় কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। যদি সম্ভব হয় অর্গানিক কিসমিস ব্যবহার করুন এবং ব্ল্যাক কিসমিস স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বেশি উপকারী।
- পরিষ্কার করে ধুয়ে নিনঃ কিসমিস অনেক সময় ধুলা,প্রিজারভেটিভ কিংবা রাসায়নিক লেগে থাকতে পারে তাই ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার জরুরি।১০-১৫টি নিয়ে পানির নিচে রেখে ১-২ বার ধুয়ে নিন। চাইলে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিতে পারেন এতে জীবাণু কমে যায়।
- পানিতে ভিজিয়ে রাখুনঃ ক্লিন ধোয়ার পর কিসমিস একটি পরিষ্কার ক্লাসে বা বাটিতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। পানির পরিমাণ আধা কাপ ১০০-১৫০ml পানিতে ১০-১৫ টি কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন।
- সময় রাত ৮-১০ টার দিকে ভিজিয়ে রেখে দিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা উচিত। এতে কিসমিস ফুলে উঠে ও ভিতরের পুষ্টি উপাদান পানিতে মিশে যায়।
কিসমিসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
কিসমিস হলো ড্রাইফ্রুটসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা প্রাকৃতিকভাবে আঙ্গুল
শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এতে নানা ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার বা ও
এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের নানা প্রয়োজন মিটায়। কিসমিসে কি কি পুষ্টিগুণ
রয়েছেন চলন তা জেনে নিই।
- ক্যালোরি ২৯৯ কিলো ক্যালরি
- প্রোটিন ৩.১ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৭৯.৩ গ্রাম
- চিনি যুক্ত শর্করা ৫৯.২ গ্রাম
- ফাইবার ৩.৭ গ্রাম
- ফ্যাট ০.৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ১.৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৭৪৯ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৬ ০.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ২ মিলিগ্রাম
কেন আমরা কিসমিস খাবো
কিসমিস হলো ড্রাই ফুডস এর মধ্যে একটি পুষ্টিকর খাবার। এটি শুধু সুস্বাদু নয় বরং
শরীর ও মনের জন্য উপকারী। মূলত আমরা কিসমিস খায় কারণ এতে থাকা শক্তি, ভিটামিন,
মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও স্বাস্থ্যকর করে
তুলে।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য কিসমিস খাওয়া।
- রক্তশূন্যতা ও আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য আমরা কিসমিস খাব।
- হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের জন্য কিসমিস শরীরের জন্য উপকার।
- হৃদরোগের ঝুকি কমাতে।
- ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে।
কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কিসমিস যদিও সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ফল। তবুও পরিমাণ সময় ও পদ্ধতির ঠিক না হলে
কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিসমিস সঠিক
নিয়মে খাওয়া জরুরি। চলুন নিয়ম গুলো জেনে নিন।
- পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
- দিনে ১-৫ টি কিসমিস যথেষ্ট।
- বেশি খেলে ক্যালরি ও সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য কম পরিমাণে ৫-১০টি খাওয়া ভালো।
- কিসমিস ভিজিয়ে সবচেয়ে উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য।
- রাতে ৮-১০ টি কিসমিস পরিষ্কার পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে খালি পেটে খেলে পুঁটি সহজে শোষিত হয়। চাইলে সে পানিও খাওয়া যেতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন সহজে শরীরে প্রবেশ করে।
বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ানো যাবে
কিসমিস ছোট বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার হতে পারে। এতে থাকা
আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হাড়, হজম ও রক্তশূন্যতা
প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কোন বয়স থেকে কিসমিস খাওয়ানো যাবে বাচ্চাদেরঃ ১ বছরের নিচে সাধারণত শিশুদের
কিসমিস সরাসরি খাওয়ানো উচিত নয়। গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।১-২ বছর শিশুকে
খাওয়ানোর সময় কিসমিস কে ছোট ছোট টুকরো করে বা ভিজিয়ে চূর্ণ করে খাওয়ানো
যায়। দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে কিসমিস খাওয়ানোর সময় ধীরে ধীরে ছোট ছোট কিসমিস
পুরোপুরি চিবিয়ে খেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
কেন কিসমিস ভেজানো খাওয়া ভালো কারণ ভেজানো কিসমিস নরম হয়ে যায় এবং
হজমে সহায়তা করে। শুখনও কিসমিস সরাসরি দিলে ছোট শিশুরা গিলে ফেলতে পারে। ভেজানো
কিসমিস ধীরে ধীরে শক্তি দেই।
পরিমাণে নিয়ম করে দিবেন শিশুদের খাওয়ানোর সময়।১-২ বছরের শিশুর কে দিনে ২-৩ টি ছোট টুকরা কিসমিস যথেষ্ট।২-৫ বছরের শিশুর জন্য ৫-৭ টি ভেজানো কিসমিস খাওয়ানো যায়।
বেশি খাওয়ালে শিশুর পেট ফাঁপা বা চিনি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। তাই সঠিক
নিয়মে পরিমাণ মতন করে বাচ্চাদের খাওয়াবেন কিসমিস।
কিসমিস ভিজিয়ে পানি খাওয়ার উপকারিতা
কিসমিস পানি হল ভেজানো কিসমিসের সেই পানি যা রাতভর কিসমিস ভিজিয়ে রাখার পর সকালে
পান করা হয়। এটি কেবল হজম বা শক্তির জন্য নয় বরং শরীরের নানা সিস্টেমকে সুস্থ
রাখতে সহায়তা করে। চলুন আর কি কি আমাদের উপকার হয় জেনে নিন।
- মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়।
- ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।
- হরমোন ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- এন্টি ইনফ্লামেটর প্রভাব ফেলে।
- কিডনি ও লিভারের সংরক্ষণ করে।
- হাড়ের কোষ পূর্ণ গঠন করে।
- তক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
FAQ: প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া যেতে পারে?
উত্তরঃ প্রতিদিন সাধারণত ২০-২৫টা কিসমিস খাওয়া নিরাপদ তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ
খেলে ওজন বাড়তে পারে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
প্রশ্নঃ কিসমিস কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে?
উত্তরঃকিসমিস সারারাত বা কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা উচিত। যাতে
করে কিসমিসে থাকা পুষ্টিগুণগুলো ভালোভাবে শরীরে লাগতে পারে খাওয়ার
পরে।
প্রশ্নঃ সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়?
উত্তরঃ সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়। এবং বিভিন্ন
সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় কিসমিস রাখা উচিত।
প্রশ্নঃ কিসমিস ১ কেজির দাম কত?
উত্তরঃ বাংলাতে ১ কেজি কিসমিসের দাম সাধারণত ৬০০-৯৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মূল্য কিসমিসের প্রকারভেদ, ব্র্যান্ড ও মানের উপর নির্ভর করে। উদাহরণ গোল্ডেন
কিসমিস এক কেজির দাম ৬০০ টাকা থেকে শুরু। এবং ৯৯০ টাকা।
প্রশ্নঃ কিসমিস কিভাবে খাবেন?
উত্তরঃ কিসমিস খাওয়া সবচেয়ে ভালো উপায় হল ১ কাপের ৪ ভাগের এক ভাগ। কিসমিস
খাওয়া ভালো আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য।
শেষ কথা কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা
কিসমিস হল এক ধরনের প্রাকৃতিক সুপার ফুড। যা শক্তি বৃদ্ধি, হজম উন্নতি,
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কিসমিস
ভিজানো পানি আমরা খেলে আমাদের শরীর কিসমিসের পুষ্টিগুণগুলো খুব সহজে প্রবেশ
করে। এবং শরীরকে সতেজ ও সমৃদ্ধি রাখে। আবার অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি
গ্যাস্টিক সমস্যা বা দাঁতের ক্ষতি হতে পারে।
সঠিক নিয়মে খেলে কিসমিস একদিকে সুস্বাদু ও মিষ্টি অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর ও
পুষ্টিকর তাই প্রতিদিন পরিমিতি, ভেজানো এবং সময়মতো খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এটি
শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত, শক্তিশালী এবং সুস্থ জীবন যাপনের এর
গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এ আর্টিকেলে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কিসমিস খাওয়ানে আপনার যদি আর কোন
মন্তব্য থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান ধন্যবাদ।
সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url