পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা


পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা বা পেয়ারার পুষ্টিগুণ গুলো সম্পর্কে জানব। পেয়ারা এমন একটি ফল যা আমরা ছোটবেলা থেকে খেয়ে আসছি। রাস্তার পাশে ফেরিওয়ালা ঝুড়িতে বা বাড়ির আঙিনায় গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া স্মৃতি আমাদের অনেকেরই আছে।

পেয়ারা-খাওয়ার- ১৩টি-স্বাস্থ্যের- উপকারিতা

বেশিরভাগ মানুষ জানে পেয়ারা খেলে হজম ভালো হয়, ঠান্ডা কমে বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু এর সাধারণ ফলটিতে রয়েছে অজানা এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা যা আজও অনেকের কাছে অপরিচিত। আর্টিকেল লেখায় জানবো পিয়ারা খাওয়ার ১৩ টি নতুন ও কম পরিচালিত স্বাস্থ্য উপকারিতা যেগুলা হয়তো আপনি আগে শুনেননি কিন্তু প্রতিদিনকার জীবনে খুবই কার্যকর।

পেজ সূচিপত্রঃ পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা

পেয়ারা আমরা সকলে কমবেশি খেয়ে থাকি। কিন্তু পেয়ারা আমাদের শরীরে ও স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী সে সম্পর্কে আমাদের অতটা ধারণা নেই। পেয়ারা খেলে আমাদের শরীরের ও স্বাস্থ্যের যে উপকারগুলো হবে সে সম্পর্কে এখন নিচে জানবো।

পিরিয়ডের ব্যথা কমায়ঃ গবেষণা দেখা গেছে পেয়ারা পাতার নির্যাস পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে। এটি ইউটেরাসের মাংসপেশিকে শীতল করে ব্যথা উপশমের কাজ করে।

মানসিক চাপ ও স্ট্রেস কমায়ঃ পেয়ারা খেলে পেয়ারায় থাকা ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও অন্যান্য "হ্যাপি হরমোন" উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে কার্যকর।

মুখের ঘা ও আলসার ছাড়াতে সাহায্য করেঃ । পেয়ারা পাতার রস বা পেস্ট মুখে লাগালে মুখের আলসার বা ঘাত দ্রুত ভালো হয়। এতে অ্যান্টিসেপটিক ও জীবাণু নাশক গুণ রয়েছে যা সংক্রমণ ঠেকায়।

শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার উপসর্গ হারস করেঃ ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকার কারণে পেয়ারা ও এর পাতা ফুসফুসের প্রবাহ কমিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে।

ব্রণ ও ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করেঃ পেয়ারা পাতার বেস্ট ব্রনের উপর লাগাতে বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কাজ করে এবং সংক্রমণ কমায়। এটি মুখের দাগ হালকা করতেও কার্যকর।

জ্বড় ও গলার ইনফেকশন কমায়ঃ পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড় গড় করলে গলার ব্যথা ও ইনফেকশন কমে যায়। চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহূত হয়।

বার্ধক্য রোধ করে ও কোষ ক্ষয় কমায়ঃ পেয়ারায় থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট যেমন অলিভেশন লাইকোপিক শরীরের কোর্স ক্ষয় রোধ করে এবং বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।

ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করেঃ । স্নায়ু শান্ত রাখার কারণে পেয়ারা খেলে ঘুম ভালো হয় রাতে একটানা ঘুম না হওয়া বা ইনসমনিয়ার রোগীরা উপকার পেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

গ্যাস্ট্রিক ও আলসার প্রতিরোধ সহায়কঃ। পেয়ারা পাতায় থাকা নির্দিষ্ট উপাদান গ্যাস্ট্রিক এসিড কমাতে সাহায্য করে এটি পাকস্থলীর পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে আলসারের ঝুঁকি হারস করে।

খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায়ঃ নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তের খারাপ কলেস্টরল (LDL) কমে এবং ভালো কলেস্টরল (HDL) বাড়ে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

দৃষ্টিশক্তি ও চোখের ক্লান্তি দূর করেঃ পেয়ারায় ভিটামিন এ এর ভালো উৎস যা চোখের ক্লান্তি দূর করে এবং দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় স্কিনের সামনে কাজ করেন তাদের জন্য এটি উপকারী ফল।

হাড় ও দাঁত মজবুত রাখেঃ পেয়ারায় থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যাহার ও দাঁতের গঠনে শক্তিশালী করে। শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী ফল।

শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করেঃ পেয়ারা ও এর পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের টক্সিন দূর করে লিভার ও কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসেবে কাজ করে। যা মানব দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে পেয়ারা ফলের ভূমিকা অনেক।

পেয়ারা খাওয়ার অপকআরিতা

পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা সম্পর্কে উপরে জানলাম।পেয়ারা একটি অত্যন্ত উপকারী ও পুষ্টিকর ফল হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি খেলে শরীরের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যদি অতিরক্ত খাওয়া হয় বা কারো বিশেষ ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে তবে পেয়ারা খাওয়ার কিছু অপকারিতা হতে পারে। গবেষণা ও কিছু অপ্রচলিত বাস্তব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে কম পরিচিতি বা সচরাচর বলা হয় না এমন ৬টি অপকারিতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো।

বীর্য পাতলা ও যৌন দুর্বলতা তৈরি করতে পারেঃ গ্রাম বাংলার বহু আয়ুর্বেদিক চর্চায় মনে করা হয় অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়ার ফলে ঠান্ডা প্রকৃতির কারণে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। যা পুরুষের যৌন ক্ষমতা বা বীর্য ঘনত্ব তার প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এটা আধুনিক বিজ্ঞানের পুরোপুরি প্রমাণিত নয় তবে আয়ুর্বেদিক মতো ঠান্ডা প্রকৃতির ফল বেশি খেলে শুক্রতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে নিজস্ব প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারেঃ পেয়ারায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা সেল ড্যামেজ কমায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা যায় অতিরক্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে স্বাভাবিক ফ্রি র‍্যাডিকেল প্রক্রিয়াকে বাহিত করতে পারে। যা বিপাক ক্রিয়া সমস্যা তৈরি করতে পারে।

পেয়ারার বীজ গলাধঃ কারণে অসুবিধাঃ কিছু ক্ষেত্রে বীজ চিবিয়ে না খেলে তা সরাসরি অন্ত্রের নিচের অংশে জমে গিয়ে ব্লক তৈরি করতে পারে। যার ফলে পেটে তীব্র ব্যথা ও অপারেশন পর্যন্ত লাগতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের বীজ বাদ দিয়ে খাওয়াই ভালো পিয়ারা।

মেদবহুল রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেঃ পেয়ারা উচ্চ গ্লুকোজ লেভেল বা বিশেষ করে পাকা পেয়ারা ফ্যাট লিভার বা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাট লিভার ডিজিজ রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি লিভারের চর্বি জমাকে ত্বরানিবত করতে পারে।

অতিরক্ত ঠান্ডা প্রকৃতির ফল বাদ বা জয়েন্টের ব্যথা বাড়াতে পারেঃ অনেক সময় যাদের বাত,আর্থ্রাইটিস বা হাঁটু ব্যথা আছে। তারা পেয়ারা খেলে ঠান্ডা প্রকৃতির কারণে ব্যথা বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে ও শীতে প্রবণতা বাড়ে।

রাতের বেলা খেলে হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারেঃ পিয়ারার হজম হয় ধীর গতিতে। রাতে বেশি খাওয়া হলে তা পেটে জমে গ্যাস, বুক জ্বালা বা রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যাদের পেটে  স্পর্শকাতর তাদের রাতে পেয়ারা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

পেয়ারার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে

পেয়ারা শুধু সুস্বাদু নয় এটি এক ধরনের সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত হয়। পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে তেমনি পেয়ারার পুষ্টি গুলো ভরপুর। কারণ পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পিয়ারা থাকলে এসব পুষ্টি গুণ আমাদের স্বাস্থ্যের ঘাটতি পূরণ করবে। বিশেষ করে যারা কৃত্রিম সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলতে চান তাদের জন্য পেয়ারা একটি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য টনিক। চলুন তাহলে জেনে নিই তালিকার মাধ্যমে এক কাপ কাটা পেয়ারা পুষ্টিগুণ।

উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ১১২ kcal
ফাইবার ৮.৯ গ্রাম
প্রোটিন ৪.২ গ্রাম
ভিটামিন C ৩৭৭মি.গ্রা.
ভিটামিন A ৬২৪ IU
পটাশিয়াম ৬৮৮মি.গ্রা.
ম্যাগসিয়াম ৩৬ মি.গ্রা.
ক্যালসিয়াম ৩০মি.গ্রা.
আয়রন ০.৪মি.গ্রা.

পেয়ারার পাতা খেলে স্বাস্থ্যের উপকারিতা

পেয়ারার পাতাও পেয়ারা ফলের মত অত্যন্ত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমাদের দেশে অনেকে শুধু ফলটাকে গুরুত্ব দেই। কিন্তু আধুনিক গবেষণা ও আয়ুর্বেদী অনুসারে পেয়ারার পাতার অনেক ওষুধিগুণ রয়েছে। নিচে পেয়ারা পাতা খাওয়ার ও ব্যবহার করা স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে দেওয়া হল। পেয়ারা পাতার গুনাগুন সত্যি অনেক উপকারী।

  • পেয়ারা পাতা একটি প্রাকৃতিক এন্টোবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বহু রকম স্বাস্থ্য সমস্যা ঘরোয়া সমাধান। তবে গর্ভবতী নারী বা ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের নিয়মিত খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চলুন নিচে জেনে নেই পেয়ারা পাতা খেলে স্বাস্থ্যের কি কি উপকারিতা হয়।
  • মস্তিকের কোষ পূর্ণ গঠনের সহায়তা করে।
  • একাধিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে পেয়ারা পাতার নির্যাস ESBL বা  MRSA এর মত ওষুধি প্রতিরোধই ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। এটি ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখতে পারে পেয়ারা পাতা।
  • পেয়ারা পাতা প্রোস্টেট স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
  • হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে উপকারী হতে পারে পেয়ারার পাতা। বিশেষ করে যারা ৪০ বছর পর যাদের হাড় দুর্বল হতে থাকে তারা উপকার পেতে পারে।
  • জখম শুকাতে সাহায্য করে পেয়ারা পাতা।
  • ডিএনএ সুরক্ষা ও কোষের অকাল বাধ্যক রোধের সহায়ক পেয়ারা পাতা।
  • ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে পেয়ারা পাতা।
  • পাকিস্থলের আলসার নিরাময় সহায়ক পেয়ারা পাতা।
  • পাতার নির্যাস এমন উপাদান থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • পেয়ারার পাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করে। পাতা সেদ্ধ করেছে পানি খেলে বা গাগল করলে ঠান্ডা, গলা ব্যথা, কাশি ও জ্বরের উপসর্গ কমে।

খালি পেটে পেয়ারা খাওয়া যায় কিনা

পেয়ারা একটি অম্লত্ব- নিয়ন্ত্রণকারী, হালকা মিষ্টি ও ফাইবার যুক্ত ফল তাই সাধারণভাবে এটি খালি পেটে খাওয়া নিরাপদ কিন্তু এটি সবার জন্য একরকম নয় নিচে দুই দিক থেকে ব্যাখ্যা করা হলো।

যাদের খালি পেটে পেয়ারা খাওয়া উপকারী হতে পারে। সকালে শুরুতে পেয়ারা খাওয়া হজমে সাহায্য করে। এতে হালকা কম চিনি যুক্ত ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা শরীরকে শক্তি দেয়। বারবার থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। খালি পেটে পেয়ারা খেলে দীর্ঘক্ষন পেট ভরা লাগে ফলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কম হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মৌসুমী ১০টি এর উপকারিতা

যাদের খালি পেটে পেয়ারা না খাওয়াই ভালো। যাদের গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি আছে। পেয়ারা তে তো বা হালকা টক হতে পারে যা খালি পেটে এসইডিটির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। পেট জ্বালাপোড়া বা ফাঁপা সমস্যা হতে পারে। এমন রোগীদের খালি পেটে কোন ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে কাঁচা পেয়ার  খাওয়া অনেক ক্ষতিকর।

পেয়ারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

পেয়ারা খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যকর তেমনি সঠিক নিয়মে খাওয়া স্বাস্থ্য-সুবিধা বাড়াতে এবং অপকারিতা কমাতে সাহায্য করে নিচে পিয়ারা খাওয়ার নিয়ম ও টিপস ব্যাখ্যা করা হলো।

  • মাঝারি আকারের ১-২ টি পিয়ারা খাওয়া প্রতিদিন যথেষ্ট।
  • সকালে খালি পেটে খেলে হজম ভালো হয় এবং শরীরে এনার্জি বাড়ে।
  • দুপুরে বাস সন্ধ্যায় খেতে পারেন। তবে খালি পেটে হজম সমস্যা হলে খাবারের পরে খান।
  • পাকা পেয়ারা হজমে সহজ এবং চিনি বেশি না হয় শরীরের জন্য নিরাপদ। কাঁচা বা অর্ধ পাকা পেয়ারা কিছু মানুষের জন্য সমস্যা হতে পারে। তাই খাওয়ার সময় অবশ্যই অতিরিক্ত খাবেন না। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়।
  • পিয়ারা কেটে খাওয়া ভালো এতে হজমে সহজ হয়। পেয়ারার বীজ চিবিয়ে খাওয়া স্বাভাবিকভাবে নিরাপদ তবে বাচ্চা বা হজমে দুর্বলদের জন্য বীজ খাওয়ার সময় বাদ দিয়ে খেতে পারেন।
  • পেয়ারা খাওয়ার সাথে সরাসরি পানি খেলেও হজমে কিছু সমস্যা হতে পারে। তাই ভালো হয় ১৫-৩০ মিনিট পর পানি খাওয়া।

পেয়ারার পাতা চা রেসিপি

পেয়ারার পাতা দিয়ে চা তৈরি করার সময় যা করবেন তা হলো প্রথমে পাতাগুলো ভালো করে প্রবাহমান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ধুলা-ময়লা ও কীটনাশ অপসারণ করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। ধুয়ার পরে পাতাগুলো ছোট ছোট করে কেটে নিন। এতে উপাদানগুলো পানিতে ভালোভাবে মিশে যাবে। এরপর ১ এক পানিতে উচ্চ আচে ফুটান। পানি ফোটার পর আচ কমিয়ে দিন। তারপরে কাটা পেয়ারা পাতা পানিতে ঢালুন।১০-১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। এতে পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কার্যকর উপাদান বের হবে।

চা ঝাকুনি দিয়ে পাতাগুলো ছেঁকে শুধু পানি আলাদা করুন। পাতা বাকি থাকলে পরে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি চাইলে চায়ে এক চা চামচ মধু বা কিছু লেবুর রস মিশাতে পারেন। এতে করে চা এর স্বাদ বাড়ে এবং স্বাস্থ্যের উপকারিতা আরো বৃদ্ধি পায়। চা গরম অবস্থায় পান করুন। আপনি দিনে ১-২ কাপ বেশি না খাওয়াই ভালো।

পেয়ারা পাতা ব্যবহারের নিয়ম

পেয়ারা পাতা ব্যবহার শুধু চা বানিয়ে পান করাতে সীমাবদ্ধ নয়। বরণ এটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায় যেমন মুখের যত্ন, ত্বকের যত্ন, চুলের যত্ন এমনকি ঔষধি কাজ ব্যবহার করা হয় পেয়ারা পাতা। নিচে পেয়ারা পাতা ব্যবহারের নিয়ম দেওয়া হল।

  • ৪-৫ টি তাজা পাতা ১ কাপ পানিতে ১০-১৫ মিনিট ফুটিয়ে থেকে পান করুন। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
  • তাজা পাতা চিবিয়ে ২-৩ মিনিট রেখে দিন তারপর কুলি করুন এতে মুখের জীবাণু দূর হয় দুর্গন্ধ ও দাঁতের ব্যথা কমে।
  • ৪-৫ টি পাতা পেস্ট করে ব্রণ বা ফুসকুড়ির উপরে লাগান। তারপর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের ব্রণ ও ফুসকুড়ি ভালো হয়ে যাবে।
  • পেয়ারা পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে মাথায় লাগন। ৩০ মিনিট শ্যাম্পু করুন। এতে করে আপনার চুলের গোড়া শক্ত করে খুশকি কমায়।
  • পেয়ারা পাতা ১০ মিনিট ফুটিয়ে ছেঁকে হালকা গরম অবস্থায় পান করুন। দিনে দুইবার পান করুন চিনি ছাড়া। তাহলে আপনার ঘন ঘন পায়খানা হয়। পেটের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে পায়খানা বন্ধ করে দেবে।
  • আপনার শরীরে কোন জায়গা কেটে গেছে বা ক্ষত হয়েছে সেই জায়গায় আপনি পেয়ারা পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগান। পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন। ১-২ দিনে বার পরিবর্তন করুন। এতে করে আপনার পায়ে ইনফেকশন রোধ করে ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে।
  • আপনার পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পেয়ারা পাতার চা তৈরি করে দিনে ১-২ কাপ পান করুন। বিশেষ করে ব্যথা শুরুর ১-২ দিন আগে থেকে খান এতে আপনার পেসি শীতল করে ব্যথা কমায়।

FAQ:পেয়ারা খাওয়া স্বাস্থ্যের উপকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ পেয়ারা খেলে কি রক্তচাপ বাড়ে?

উত্তরঃ পেয়ারা খেলে সাধারণত রক্তচাপ বাড়ে না বরং পেয়ারা থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্নঃ পেয়ারা কি কিডনির জন্য ভালো?

উত্তরঃ হ্যাঁ পিয়ারা কিডনির জন্য ভালো হতে পারে তবে পরিমাণ মতো খেতে হবে।

প্রশ্নঃ পেয়ারা খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?

উত্তরঃ পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ফল। তবে অতিরক্ত পরিমাণ খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন পেটের সমস্যা, হজমের সমস্যা, দাঁত ব্যথা এবং ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা এমন একটা ফল যা পুষ্টিগুনে ভরপুর ও সহজলভ্য। হাট বাজারে পাওয়া যায় পেয়ারা ফল। দামেও সস্তা। এখন সারা বছর পেয়ারা চাষ হয়। তাই বর্তমানে পিয়ারা ফল বারোমাসি পাওয়া যায়। পেয়ারা ফলে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা উপরে আলোচনা করেছি। চাহিদা শারীরিক অবস্থা ও সঠিক মেনে পেয়ারা খেলে এটি নিঃসন্দে এক অন্যান্য প্রাকৃতিক ওষুধের মতো উপকারী।

নিয়মিত ও পরিমাণ মতো পেয়ারা খাওয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। সময় সঠিক নিয়মে খাবেন এবং পেয়ারার পাতা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের উপকারিতা হবে। প্রাচীন সময়ের মতো আজো পেয়ারা আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি পেয়ারা খাওয়ার ১৩টি স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এরকম স্বাস্থ্য ভিত্তিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url