দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরষ্কার
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্যের পথে পরিচালিত করে। সবচেয়ে বড় নিয়ামতের মধ্যে হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজ কেবল ইবাদত নয় এটা হল আত্মার পরিশুদ্ধি হৃদয়ের প্রশান্তি।
এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কোরআন ও হাদিসে নামাজের গুরুত্ব ফজিলত অসংখ্য বার উল্লেখ করা হয়েছে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং নামাজ পড়লে কি পুরস্কার পাওয়া যায় তা নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পেজ সূচিপত্রঃ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পুরস্কার
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কি হয়
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী
- কেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এত গুরুত্বপূর্ণ
- নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি
- নামাজ না পড়ার ভয়াবহ পরিণতি
- FAQ: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত
ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হল নামাজ। ঈমান ও কুফর এর মধ্যে পার্থক্য হল
নামাজ। মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ তাআলা মানুষ ও
জ্বীন সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয় এবং
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেরা জীব। মানুষ ও জিন জাতির কল্যাণ বা সফলতা এবং মানসিক শান্তি
রয়েছে আল্লাহ ইবাদতের মাধ্যমে।
আল্লাহর এবাদত এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবাদত হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সাঃ) উদাহরণস্বরূপ আনলো সালাত বা নামাজ গোটা উম্মতের জন্য। মেরাজের রাতে আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে নামাজ এনেছিলেন রাসূল (সাঃ)। এজন্য নামাজকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। মুসা (আ.) এরপর মাসে কয়েক দফা আল্লাহ তাআলার কাছে গিয়ে সর্বশেষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ থাকলো। এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব এতটাই রয়েছে যে, যে নামাজ ছেড়ে দিবে তার জন্য পৃথিবীতে এবং পরকালের কঠোর শাস্তি রয়েছে।
আর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তা আল্লাহ তাকে বিনা হিসাবে জান্নাত
প্রবেশ করাবেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে সগিরা গুনাহ কাফফারা আদায় হয়ে
যাবে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত নিয়ে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা
রয়েছে। একজন মুসলিমের জীবনে নামাজ শুধু ফরয নয় এটি জান্নাতের চাবি এবং আল্লাহর
নৈকট অর্জনে মাধ্যম।
হযরত আবু হুরাইয়া (রা) বলেন রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন পাঁচ অক্ত সালাত একজন
মা থেকে অপর জুম্মা এবং এক রমজান থেকে অপর রমজান কাফফারা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও মন দুটোই ভালো থাকে। দৈনিক পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফজিলত। এখন নিচের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের
ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব।
ফজর নামাজের ফজিলতঃ ফজরের নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা
নিয়মিত আদায় করা আবশ্যক। ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করলে পুরো রাত নফল
নামাজ পড়া সমান সওয়াব পাওয়া যায় ও বরকত লাভ করে। আল্লাহতালা বলেন " যারা
অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে
ব্যয় করে।" (সূরা বাকারা আয়াত ৩)।
এ আয়াত প্রমাণ করে যে নামাজ কায়েম করা ঈমানদারের প্রথম বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে তিনি আল্লাহর জিম্মায় চলে গেলেন। ফরজের নামাজ মুমিনকে পাপ থেকে রক্ষা করে এবং চরিত্র কে পরিশুদ্ধ রাখে।" নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে" (সূরা আনকাবুত আয়াত ৪৫)।
রাসূল (সাঃ) বলেন " যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ ঠিক ভাবে আদায় করল আল্লাহ তার জন্য
জান্নাত বাধ্যতামূলক করলেন" (আবু দাউদ)। রাসুল (সাঃ) বলেন " কিয়ামতের দিন
বান্দার প্রথম হিসাব হবে নামাজের ব্যাপারে যদি নামাজ ঠিক থাকে, বাকি সব আমল ঠিক
হবে" কিয়ামতের দিন ফরজ নামাজগুলো মুফতি এবং ধ্বংসের প্রথম চাবি। হাদিসে
এসেছে " ফরজ ও আসরের নামাজের সময় ফেরেশতারা বদল হয় এবং তারা আল্লাহর কাছে গিয়ে
বান্দার নামাজের সাক্ষী দেয় (বুখারী)।
যোহর নামাজের ফজিলতঃ যোহর নামাজ দিনের মধ্যবিত্ত সময়ে ফরজ ইবাদত। এটি মুসলমানের
জন্য আল্লাহ পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছে। ব্যস্তদিনের মাঝে জোহর নামাজকে আল্লাহ
স্মরণ করে দেয় এবং দুনিয়ার কাজের মতো আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহরের নামাজ হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
একটি অংশ।
আরো পড়ুনঃ
ফরজ নামাজের নিয়ম ও গুরুত্ব এবং ফরজ নামাজের ১০টি ফজিলত
আল্লাহ তাআলা বলেন " নামাজ কায়েম কর এবং সূর্য ঢলে পড়া থেকে রাতের অন্ধকার
পর্যন্ত নামাজ আদায় কর।" (সূরা ইশরা আয়াত ৭৮)। নামাজের সফলতার পথ " নিশ্চয়ই
মুমিনরা সফলকাম যারা তাদের নামাজি বিনয়ী" (সূরা মুমিনুন আয়াত১-২)। রাসুল (সাঃ)
বলেন " গরমের সময় জোহরের নামাজ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত বিলম্মত কর কারণ প্রচন্ড
গরমের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস।" (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুল (সাঃ) " পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত সময়ের
মধ্যে যে গুনাহ হয়, সেগুলো ক্ষমা হয়ে যায় যদি বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো"
(মুসলিম)। জহর নামাজ ফরজ নামাজগুলোর মধ্যে একটি যা প্রতিদিন গুনাহ মাফের কারণ
হয়। যদি এক না আসর নামাজের কথা স্পষ্টভাবে এসেছে যেহেতু প্রত্যেকটি খরচ নামাজই
ফেরেশতাদের পক্ষে বহন করে।
আসর নামাজের ফজিলতঃ কোরআনের আলোকে আল্লাহ তা'আলা বলেন সব নামাজের প্রতি যত্নবান
হও বিশেষ করে মধ্যবিত্ত নামাজে এবং আল্লাহ সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও। হাদিসের
আলোকে রাসুল (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দিল সে তার আমলনামা নষ্ট
করলো। আসর নামাজ আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি নবী (সাঃ) আরো বলেছেন আসরের নামাজ এমন একটি
নামাজ যার সময় আল্লাহ তায়ালা আসমান তার বিশেষ রহমত নজর দেন।
মাগরিবের নামাজের ফজিলতঃ কোরআনের আলোকে আল্লাহতালা বলেন 'দিনে দুই প্রান্তে এবং
রাতের কিছু অংশে এ নামাজ আদায় করো, (সূরা হুদঃ আয়াত ১১৪)। হাদিসের আলোকে
রাসুল (সাঃ) 'যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফরজের নামাজ জামাতের সাথে পড়বে সে পুরো রাত
এবাদত করল,। আরো বলেছেন রাসুল (সাঃ)' যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পরে ছয় রাকাত
নামাজ পড়বে এবং কোন কথা বলবে না তার জন্য ১২ বছরের এবাদতের সওয়াব লেখা হবে,।
মাগরিব নামাজের পরে রাসূল (সাঃ) এই দোয়াটি বেশি করতেন " আল্লাহুম্মা
আজিরনি মিনান নার"। এই দোয়াটি মাগরিবের নামাজের পর সাতবার করে
পড়লে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদে রাখবেন।
এশার নামাজের ফজিলতঃ কোরআনের আলোকে আল্লাহ তা'আলা বলেন' সূর্য ঢলে পড়া থেকে
রাতের অন্ধকারে পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর,। হাদিসের আলোকে রাসুল (সাঃ) বলেছেন 'যে
ব্যক্তি এশার ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করল সে যেন পুরো রাত ইবাদত করল,।
এসার নামাজ না পড়া মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)
বলেছেন' মুনাফিকদের জন্য ভারী নামাজ হচ্ছে এশার ও ফরজ, এর সওয়াব কত তারা যদি
জানতো তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে আসতো,। এশার নামাজ দিনে সব গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম
রাতের এবাদত শুরু হওয়ার আগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সেরা সময় এটি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পুরস্কার
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মোমিনদের জন্য বাধ্যতামূলক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বলে
জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দেয় আল্লাহ। নামাজের মধ্যে রয়েছে শান্তি। তাই
মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ, জোহর,
আসর, মাগরিব ও এশা এ নামাজগুলো নিয়মিত আদায় করলে আল্লাহতালা বান্দাকে পুরস্কার
দিয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো
আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। চলুন পুরস্কার গুলো
সম্পর্কে জেনে নিন।
- তার অভাব দূর করবেন।
- কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিবেন।
- ডান হাতে আমলনামা দিবেন।
- বিজলী নাই পুলসিরাত পার করাবেন।
- বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব
- নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভর মধ্যে দ্বিতীয় এবং এটি মুমিনদের জন্য অপরিহার্য এবাদত।
- নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর আরো কাছাকাছি যেতে পারে এবং তার সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারে এবং তার নৈকট্যতা লাভ করে।
- নামাজ মানুষকে মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং দুঃখ কষ্ট লাভ হবে সাহায্য করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করলে সেই ব্যক্তির জীবনের সকল সমস্যা সমাধান করে দেবেন আল্লাহ।
- কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে মৃত্যুর পর ছাওয়াল-যওয়াব সহজ করে দেন আল্লাহ।
- কিয়ামত দিন নামাজে হিসাব সবার আগে নেওয়া হবে যারা নিয়ম মতন নামাজ আদায় করবে তাদের হিসাব সহজ হবে বলে আশা করা যায়।
- যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন বলে হাদিসে উল্লেখ্য আছে।
- অন্যান্য উপকারিতা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে সামাজিক মানুষের নৈতিক চরিত্র পরিবর্তন হয়।
- একজন খারাপ মানুষ যদি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করেন তাহলে তার সব দিক দিয়ে পরিবর্তন ঘটবে এটি হচ্ছে আল্লাহর একটি বড় নেয়ামত।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কি হয়
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। নিয়ম মত নামাজ
পড়লে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট অর্জন করা যায় যা পরকালের মুক্তির পথ খুলে দেয়।
এছাড়া নামাজ শারীরিক ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং জীবন শৃঙ্খলা ও
প্রশান্তি বয়ে আনে। সঠিকভাবে নামাজ আদায় করলে আল্লাহ খুশি হন। এবং আল্লাহর সাথে
সম্পর্ক ভালো থাকে।
- আল্লাহ সন্তুষ্ট লাভ করা যায়
- পরকালের মুক্তি এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা ও জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং শারীরিক উপকারিতা আসে।
- নামাজ মানুষকে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা থেকে মুক্তি দেয়।
- নামাজ মানুষকে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
- নামাজ আত্মিক পরিশুদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী
ফরজঃ ফরজ নামাজের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে এবার সূর্য উদয়ের
পূর্ব পর্যন্ত এ সময় থাকে। রাত শেষ আকাশে পূর্ব দিগন্তের লম্বা আকৃতির যে আলো
রেখা দেখা যায় তাকে বলে সুবহে সাদিক। তবে মেয়েদের আজানের পরপর নামাজ পড়া ভালো।
এবং ছেলেদের জামাতে সাথে নামাজ পড়া ভালো।
যোহরঃ দুপুরে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ছায়া আসলে বাদে কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত এর সময় থাকে কোন বস্তু ঠিক দুপুরে সমাজে ক্ষুদ্র ছায়া থাকে তাকে বলে ছায়া আসলি।
আসরঃ জোহর সময় শেষ হলেই আসর সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান
থাকে। তবে সূর্যের রঙ হলুদ হওয়ার আগে আসর সালাত আদায় করা উচিত।
মাগরিবঃ সূর্যাস্তের পর থেকে মাগরিব সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে যতক্ষণ
নীলিমা বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ সময় থাকে। সূর্যাস্তের পরপর নামাজ শুরু
করে দিতে হবে।
এশাঃ মাগরিবের সময় শেষ হলে এসার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সুবহে সাদিক পূর্ব পর্যন্ত
বিদ্যমান থাকে। তবে মধ্যরাতের আগে এ নামাজ আদায় করা উত্তম।
জুমাঃ শুক্রবার আদায় করতে হয় এ নামাজ। সালাত আলাদা কোন ওয়াক্ত নেই যোহরের
সময় এ নামাজ আদায় করতে হয়।
আমরা এতক্ষণ জানলাম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী আমরা।এখন জানব নামাজের
নিষিদ্ধ সময়সূচী গুলো।
- ঠিক সূর্যোদয়ের সময়
- ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়
- ঠিক সূর্যাস্তের সময়
কেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এত গুরুত্বপূর্ণ
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটি
মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য একটি ইবাদত। এটা আলম সন্তুষ্ট অর্জন আর্থিক পরিশুদ্ধি
এবং পার্থক্য ও পর ও লৌকিক কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এত
গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে নিচে উল্লেখ করা হলো।
- আল্লাহর নির্দেশ পালন করা।
- আর্থিক পরিশুদ্ধি নামাজ মানুষকে কুপ্রবৃদ্ধি থেকে দূরে রাখে।
- পার্থিব ও পার লৌকিক কল্যাণে বয়ে আনে।
- নামাজ মুসলিমদের ইহকাল ও পরকাল শান্তির ও নিরাপদ এনে দেয়। এবং আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করেন।
- নিয়মিতনামাজের মাধ্যমে শারীরিক উপকারিতা হয়।
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলে মুনাফিক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- নামাজ আল্লাহর কাছে প্রিয় একটি আমল। প্রতিদিন নামাজ পড়লে আল্লাহর নিকটত লাভ করা যায়।
- নামাজ মানুষকে সর্বদা আল্লাহর কথা স্মরণ করে দেয় এবং আল্লাহর প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিম দের ঐক্যের প্রতীক।
- প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিসে বর্ণনা করেছেন।
নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি
নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি ইসলামের রয়েছে। বিশেষ করে ভালোভাবে অজু
করে একাগ্র চিত্তে নামাজ আদায় করলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ
তায়ালা বান্দার পূর্ববর্তী গুনহা সমূহ ক্ষমা করে দেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
নিজের ভুল স্বীকার করে আল্লাহর কাছে নিষ্ঠার সাথে নামাজে দোয়ার
মাধ্যমে চোখের পানি ফেলে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে
দেবেন। আল্লাহ অনেক দয়ালু এবং রহমত শীল।
- প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায় করলে সগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
- এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান পর্যন্ত সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায় যদি কেউ যথাযথভাবে জুমা ও রমজানের রোজা পালন করে।
- সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা ছোট-বড়, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্যে-গোপনে সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা থেকে লাভের আশা করতে পারে।
- জামাতে সাথে নামাজ পড়লে গুনাহ মাফ হয়।
- ভালো কাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়।
- তাহাজ্জুদের নামাজ পড়লেও গুনাহ মাফ হয়।
- নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় তবে সব সময় মনে রাখতে হবে আন্তরিকভাবে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে সে খারাপ কাজ না করার প্রতিশ্রুতি করা গুনহা মাফের জন্য জরুরী।
নামাজ না পড়ার ভয়াবহ পরিণতি
যে ব্যক্তি নামাজে অবহেলা করবে এবং সঠিকভাবে নামাজ আদায় করবে না তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। সঠিকভাবে নামাজ আদায় না করলে দুনিয়াতেও আখেরাতে শাস্তি অনিবার্য। যারা নামাজ পড়ে না তাদের জন্য আল্লাহর রহমত উঠে যায়। তাদের জীবনে গুনাহ মাফ হয় না। যে ব্যক্তি নামাজ আদায় না করে আল্লাহ তাকে ১৪ টি শাস্তি দিবেন। দুনিয়াতে পাঁচটি, মৃত্যুর সময় তিনটি, কবরে তিনটি এবংকবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি। চলুন শাস্তি গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
দুনিয়াতে পাঁচটিঃ তার হায়াত থেকে বরকত কমে যাবে। চেহারা থেকে নেককারের
নিদর্শন লোপ পাবে। তারা কোন নেক আমলের প্রতিদান দেওয়া হবে না। তার কোন
দোয়া কবুল হবে না। নেককারদের দোয়া থেকে সে বিরত থাকবে।
মৃত্যুর সময় তিনটিঃ সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে। অনাহারে মারা যাবে। এমন
পিপাসার্ত অবস্থায় মারা যাবে যে তাকে পৃথিবীর সব পানি পান করালো তার পিপাসা
মিটবে না।
কবরে তিনটিঃ কবরে সংকীর্ণ হয়ে এত জোরে চাপ দিবে যে, তার পাজরের একদিকে হাড় বিপরীত দিকে ঢুকে যাবে। কবরে আগুন ভর্তি করে রাখা হবে যে আগুনের জ্বলন্ত কয়লায় রাত দিন জ্বলতে থাকবে। তার কবরে এমন ভয়ংকর বিষধর সাপ রাখা হবে যা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত দর্শন করতে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ছোট বাচ্চাদের ইসলামিক নাম ও অর্থসহ
পুনরুত্থানের সময় তিনটিঃ কঠোরভাবে হিসাব নেওয়া হবে। আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন। জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অপর বর্ণনায় আছে বিচার দিবসে তার কপালে তিনটি লেখা থাকবে। হে আল্লাহর হক
নষ্ট কারী। হে আল্লাহর অভিশপ্ত। তুমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছ তেমনভাবে আজকে
আল্লাহর রহমত থেকে বিরত হবে।
নামাজ না পড়ার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ইসলামে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নামাজ ত্যাগ করার কারণে ইহকাল ও পরকালের বিভিন্ন শাস্তি সমূহ হতে হয় এর মধ্যে
রয়েছে জীবনের বরকত কমে যাওয়া চেহারা থেকে নূর বা উজ্জ্বলতা হার দুনিয়ার জীবনে
অশান্তি পরকালে কঠিন শাস্তি এবং জাহান্নামের প্রবেশ করা।
FAQ: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ নামাজের মধ্যে কোন কোন দোয়া পড়তে হয়?
উত্তরঃ নামাজের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট দোয়া নাই তবে সুরা ফাতেহা এবং অন্য একটি
সূরাতেও নামাজ পড়া যায়।
প্রশ্নঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা অর্থ কি?
উত্তরঃ আমার মহান রবের সর্বোচ্চ পবিত্রতা ঘোষণা করছে অথবা আমরা সর্বোচ্চ
পালনকর্তার কতই না পবিত্র।
প্রশ্নঃ নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হয়?
উত্তরঃ নামাজ দিনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান যে নামাজ পড়ে না তার ঈমান খুবই
দুর্বল।
প্রশ্নঃ ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হয়?
উত্তরঃ যদি কেউ ঈদের নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেন তাহলে হানিফি হতে এটি একটা
গুনাহর কাজ। কেননা ওয়াজিব ইবাদত পালন না করা গুনাহ হিসেবে গণ্য হয়। তবে যদি কোন
যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যেমন অসুস্থতা বা যাত্রার কারণে নামাজ ছুটে যায় তাহলে
আল্লাহর রহমত এর দৃষ্টিতে তা মাফ হতে পারে।
শেষ কথা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার
আমরাও উপরে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার গুরুত্ব এবং শাস্তি সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করেছি। মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো ফরজ। নামাজ না পড়লে আমাদের ইহকাল পরকাল শাস্তি রয়েছে। তাই আমাদের কুরআনের আলোক বা হাদিসের নিয়ম মেনে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। নামাজ পড়লে মুমিনদের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দেয় আল্লাহ তায়ালা।রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে তার জন্যই দুনিয়াতে এবং আখেরাতে পুরস্কার রয়েছে।
নামাজের মাধ্যমে আমাদের আল্লাহর কাছে যার একটা সুযোগ তৈরি হয়। এবং তার রহমত লাভ করা যায়। তার চেহারা নুরের মত উজ্জ্বল হয়। তাই আমাদের প্রত্যেক মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া জরুরী।দুনিয়া- আখেরাতে শান্তি নিতে হলে আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া উচিত। কারণ নামাজের মধ্যে রয়েছে সুখ শান্তি ও মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা। তাই আসুন আমরা সকল মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আজ থেকে শুরু করে দি।
এতে করে দুনিয়া ও আখেরাতে এবং শারীরিক সুস্থতা সেই সাথে সামাজিক উন্নয়নের ঐক্যতা মধ্যে দিয়ে নিজেদেরকে পরিবর্তন করি। আর্টিকেল এর মধ্যে নামাজের ফজিলত এবং পুরস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এতে যাতে আপনার উপকারে আসে তাহলে আপনার মত হতে কমেন্ট বক্সে জানান আর এরকম সকল তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটে ভিজিট ধন্যবাদ।
সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url