তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাকাত দোয়া ও সময়সূচি
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাকাত দোয়া ও সময়সূচী অনেকেই জানতে চাচ্ছেন।তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর সবচেয়ে ফজলত পুণ্য ও শ্রেষ্ঠতম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ।আল্লাহতালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,'হে চাদরাবৃত, তুমি রাত্রিতে প্রার্থনার জন্য দাঁড়াও, রাত্রির কিছু অংশ বাদ দিয়ে,অর্ধেক অথবা তার কিছু কম বা বেশি,। তুমি কোরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে স্পষ্ট ওসুন্দরভাবে।(সূরা মুজ্জাম্মিল,আয়াত১-৪), আমরা এখন আর্টিকেলের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজে নিয়ম নিয়ত রাকাত দুয়া ও সময়সূচী এবং ফজিলত সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাকাত দোয়া ও সময়সূচী
- তাহাজ্জুদ নামাজ কি
- তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলের পার্থক্য
- আল কুরআনের তাহাজ্জুদ সালাত
- হাদিসে তাহাজ্জুদ সালাতের কথা বলা হয়েছে
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
- কয় রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ
- কোন দোয়া তাহাজ্জুদ নামাজে পড়তে হয়
- তাহাজ্জুদ নামাজ নফল না সুন্নত
- তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়
- তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী
- তাহাজ্জুদ নামাজের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে দোয়া পড়তেন
- কোন দোয়া পড়লে তাহাজ্জুদ নামাজে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
- তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব
- শেষ কথা তাহাজ্জুদ নামাজে নিয়ম,নিয়ত,রাকাত,দোয়া ও সময়সূচী
তাহাজ্জুদ নামাজ কি
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাকাত দোয়া ও সময়সূচী জানাটা অনেক জরুরী।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে সাথে তাহাজ্জুদ নামাজকে সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে।
মানুষ আল্লাহর কাছাকাছি রহমত এর আশায় গভীর রাতে জাগ্রত হয়ে যে নামাজ
আদায় করা হয় তাকে সালাতুল তাহাজ্জুদ বা তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। কোরআনে বলা
হয়েছে নবী মুহাম্মদ(সাঃ)কে' হে চাদর মুড়ি দেওয়া রাতের কিছু অংশে উঠে দাঁড়াও,
অর্ধেক রাত অথবা তার চেয়ে কিছু কম, অথবা কিছু বেশি এবং কুরআন ধীর-স্থির ভাবে
তেলাওয়াত কর সুন্দর ও স্পষ্টভাবে, আমি তোমার উপর ১ গুরতার বাণী নাজিল করব। রাতের
ইবাদত সবচেয়ে দৃঢ় এবং মনোযোগের জন্য উপযুক্ত'।( সূরা আল মুজাম্মিল আয়াত১-৬)
আল্লাহতালা নবী মুহাম্মদ(সাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছেন গভীর রাতে উঠে তাহাজ্জুদের
মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করতে এটাই তাহাজ্জুদের সরাসরি নির্দেশনা আল্লাহর কাছাকাছি
পৌঁছানোর। তাহাজ্জুদ নামাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।
তাহাজ্জুদ ফিল লাইলঃ তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি 'হাজ্জাদা' শব্দ থেকে নির্গত।
রাতের গভীরে যে নামাজটা আদায় করা হয় তাকে বলা হয় তাহাজ্জুদ ফিল লাইল বা সে
রাতে তাহাজ্জুদ পড়েছে।(তা'রিফ ওয়া মা'না তাহাজ্জুদ)। পরিভাষায় তাহাজ্জুদ বলা
হয়। নামাজ আদায় জন্য রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হও আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন
রাতের কিছু অংশ তোমার জন্য নফল হিসেবে তাহাজ্জুদ আদায় করা।(সূরা বনী ইসরাইল
আয়াত ৭৯)
কিয়ামুল লাইলঃ তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ যাকে বলা হয় রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামে পরিচিতি। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য এটা একটি নফল ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাধ্যতামূলক কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক নয়। নবী মোহাম্মদ(সাঃ) তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন এবং তার সাহাবীদের এটি পালনে উৎসাহিত করতেন। আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওপর তাহাজ্জুদ সালাত বাধ্যতামূলক করেছিলেন।
তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলের পার্থক্য
দুই নামাজের মধ্যে পার্থক্য হল রাতে ঘুমানোর পরে যে নামাজ আদায়ের জন্য
জাগ্রত পেয়ে যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। অল্প সময়ের
জন্য হোক বা বেশি সময়ের জন্য হোক রাতে জাগার পর যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে
তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়।
কিয়ামুল লাইলের পার্থক্য হল নামাজের পরে জায়নামাজে বসে বা অজুরত অবস্থায় জিকির
দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে পালন করা সেটাই হচ্ছে কিয়ামুল
লাইল। এটার কোন নির্দিষ্ট সময় নাই আপনি এগুলো রাতে যে কোন সময় পড়তে পারেন
তাহাজ্জুদ হলো কিয়ামুল লাইলের একটি প্রকার এটি ঘুমের পর রাতে নামাজ আদায়ের আবাদ
জাগ্রত হওয়াকে বলে আল্লাহ মুনাফা হারুন বায়না তাহাজ্জুদ ওয়া কিয়ামুল লাইল।
সাহাবী আল-হাজ্জাজ ইবনে গাজিয়্যাহ (রাঃ) বলেন তোমরাই কেউ যদি রাতে জাগরিত হয়ে
সকাল হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় কর তাহলে সে তাহাজ্জুদ আদায়কারী হিসেবে বর্ধিত
হবে। কেননা তাহাজ্জুদ হল ঘুম থেকে জেগে নামাজ পড়া এরপর ঘুমিয়ে আবার জেগে নামাজ
পড়া ।রাসুল (সাঃ) এর তাহাজ্জুদ নামাজ এমন ছিল।
আল কুরআনের তাহাজ্জুদ সালাত
'তারা রাতে সামান্য অংশই নিদ্রা অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষে প্রহরে তারা ক্ষম
প্রার্থনা করে সূরা' আল যারিয়াত (আয়াত ১৭-১৮)
ব্যাখ্যাঃ যারা আল্লাহ ভীরু তারা রাতের শেষভাগে উঠতো এবং তাহাজ্জুদের সময়
ইস্তেগফার করত এখানে ফরজ গরদের আছে।
কুরআনে আর একটা সূরাই বলা হয়েছে সূরা বিন ইসরাইল সূরা নাম্বার ১৭(আয়াত ৭৯) 'আর রাতের কিছু অংশে কুরআন আয়াত দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত সম্ভবত তোমার প্রতিপালক তোমাকে একটা প্রশংসিত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করবে'।
বাখ্যাঃ এখানে এসব থেকে তাহাজ্জুদ এসেছে এটি ছিল নবীজির জন্য ফরজ আর আমাদের জন্য
উত্তম নফল নামাজ বা ইবাদত।
কুরআনে আর একটা সূরাই বলা হয়েছে সূরা নাম্বার ৩২ সূরা আস সাজদা (আয়াত ১৬-১৭)
'তাদের পাশ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা থাকে তারা ভয়ও আশা দিয়ে তাদের বরকে ডাকে আর
আমি তাদেরকে যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে তাদের জন্য কি লুকানো আছে
তা কোন প্রাণী জানে না এটা তাদের কর্মের প্রতিদান'।
ব্যাখ্যাঃ এই সূরায় বলা হয়েছে এখানে রাতের বেলায় যারা নামাজে দাঁড়ায় দোয়া করে তাদের জন্য জান্নাত লুকানো প্রবেশ করা আছে বলে জানানো হয়েছে এ আয়াত তাহাজ্জুদের এবাদতের মর্যাদা বুঝায়।
সূরা নাম্বার ৭৬ সূরা ইনসান( আয়াত ২৬)' আর রাতের কোন অংশে তারা আল্লাহর সামনে
সিজদায় পড়ে যাও, এবং দীর্ঘ রাত জুড়ে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করো'।
ব্যাখ্যাঃ এটিও তাহাজ্জুদের প্রশংসা ইঙ্গিত দেয় গভীর রাতে আল্লাহর ইবাদতের সময়
কাটানো।
আল কুরআনের সূরা আল-মজ্জামিল এ উল্লেখ করা হয়েছে 'অবশ্যই রাতে ঘুম থেকে উঠে মনকে
দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময় কুরআন পাঠ ও জিকিরে একবারে
যথার্থ।
সূরা আল ফুরকান এ ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা
তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকে রাত কাটিয়ে দেয়।
কুরআনে আরেকটি সূরার কথা বলা হয়েছে সূরা আল ইমরান আয়াত নাম্বার ১৭ তারা ছিল
কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল অটল অবিচল সত্যের অনুসারী এবং রাতের শেষ প্রহরে
আল্লাহর কাছে ভুল ত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী।
হাদিসে তাহাজ্জুদ সালাতের কথা বলা হয়েছে
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আমি মোঃ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি
ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।
হযরত আবু হুরাইয়া থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের তৃতীয় ভাগে অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছ যে আমায় ডাকবে আমি তার ডাকেই সাড়া দিবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তাই দান করব, কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। এই সময়টা আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ নামাজে কান্নারত অবস্থায় জায়নামাজে বসে যা চাহা যায় তাই পাওয়া যায় আল্লাহ তাআলা সেটাই পূরণ করে। (বুখারী ও মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন একটা নামাজ এ নামাজ পড়লে মনে যেমন শান্তি আছে। আপনার পাপ মোচন হবে, আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করবে আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করে দিবে আপনাকে সকল বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করবে আপনি যতই পাপী ব্যক্তি হোন না কেন আল্লাহর কাছে জায়নামাজে কান্না করলে,আল্লাহর রহমতে আপনার সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম ইবাদত।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের উত্তম সময় হচ্ছে রাতে শেষ তৃতীয় অংশে পড়া। তবে ঘুম থেকে না
জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশারের নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বেতর আগে তা পড়ে
নেওয়া জায়েজ আছে। তাহাজ্জুদের নামাজের সময় শুরু এশার নামাজের ওয়াক্তে। তবে
তাহাজ্জুদের নামাজের উত্তম সময় শুধু রাতে ৯ঃ৪৫ থেকে ৩ঃ৪২ মিনিট পর্যন্ত
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়। এক কথায় ফজরের নামাজের আগে হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে
হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজে সূরা উঁচু বা নিচু আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারো যদি অসুবিধা হয় তাহলে আস্তে করে পড়া উচিত। সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের যেভাবে নামাজ আদায় করেন তাহাজ্জুদ নামাজ সেভাবে আদয় করতে হবে। তবে প্রতি রাকাতে দুই রাকাত করে নামাজ পড়তে হবে।সাধারণত নামাজের মতন রুকু, সেজদা, তাশাহহুদ,দুরদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরতে হবে।
- তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে নিজেকে পরিষ্কার করুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন তারপর ওযু করুন নামাজে যান।
- নামাজের শর্ত সারিয়াতে পূরণ করে জায়নামাজে দাঁড়াবেন
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করুন
- তাকবীর তাহারিমা আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধুন
- সানা আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ ছেড়ে সুরা ফাতেহা এবং অন্য আরেকটি সূরা পড়ুন
- এবার অন্যান্য নামাজের নায়ে বাকি নামাজ কন্টিনিউ করুন
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
কেউ কেউ আরবীতে নিয়ত না করতে পারলে বাংলাতে নিয়ত করতে পারবেন। কেবলার দিকে
দাঁড়িয়ে আল্লাহ আকবার বলে নিয়ত করতে পারবেন। কারণ আল্লাহ আপনার মনের ভাষা
বুঝতে পারে। আবার আপনি বাংলাতে এভাবে নিয়ত করতে পারেন' আমি কেবলামুখী হয়ে
আল্লাহর জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছে "আল্লাহু আকবার" এভাবেও
বলতে পারেন।
আরবিতে নিয়তঃ "নাওয়াইতোয়ান উছললিয়া লিল্লাহি তায়া'লা রক'আতাই সলাতিত তাহাজ্জুদি,সুন্নাতু
রসুলিল্লাহি তায়া'লা,মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতি কা'বাতিশ সারিফাতি "আল্লাহু
আকবর"।
কয় রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ
তাহাজ্জুদ নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নাই। আপনি জয় রাকাত পড়তে পারেন। কেউ ২ রাকাত কেউ ৪ রাকাত কেউ ৮ রাকাত কেউবা ১২ রাকাত নামাজ পরে। তাহাজ্জুদ যেহেতু নাফল নামাজ তাই এ নামাজের নির্দিষ্ট কোন রাকাত নেই তবে রাসূল(সাঃ) ৪,৮,১২ রাকাত পড়তেন। তবে৮ রাকাত পড়ায় উত্তম।
কোন দোয়া তাহাজ্জুদ নামাজে পড়তে হয়
তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই যে কোন সূরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ
আদায় করা যায়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের লম্বা কেরাত নেয়া উত্তম। আবার অনেকে আছে
রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং সূরা ইখলাস তিনবার করে পাঠ করে। আবার অনেকে আছে সূরা
ফাতেহার সাথে কুরআনের আয়াত দিয়ে নামাজ শেষ করে।
তাহাজ্জুদ নামাজ নফল না সুন্নত
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল নামাজ। নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে
তাহাজ্জুদ নামাজ। যে ব্যক্তি প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে আল্লাহ তাকে নিজে
পুরস্কার দেবে। তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত নফল ইবাদত যদিও এটি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আদায়
করতে এবং তার আমল অনুসারে ওর থেকে সুন্নাহ হিসেবে গণ্য হতে পারে তবে ফরজ বা
ওয়াজিবের মতো বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণে এটি নফল এবাদত। এই নামাজ করলে
সওয়াব আছে কিন্তু আদায় না করলে কোন গুনাহ হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়
তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয় এই প্রশ্নটা অনেকের মনে।অনেকে মনে করেন তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয় আসলে এ কথাটা ভিত্তিহীন।
অন্ধকারে কোন নামাজী হবে না পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করলে আলোতে পড়তে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে আলো জেলে নামাজ পড়তে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী
তাহাজ্জুদের নামাজের নির্দিষ্ট সময়সূচি জানতে নির্দিষ্ট তারিখ এবং স্থান
এলাকার উপর নির্ভর করে নামাজের টাইম শুরু হয়। তাহাজ্জুদের নামাজ শুরু হয় রাত
৯:৪৫ মিনিট থেকে রাত্রি৩ :৪২ মিনিট পর্যন্ত এই টাইমের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ
পড়তে হবে।তাহাজ্জুদ নামাজের সাধারণ সময় হল এশারের নামাজের পর থেকে শুরু করে
ফরজের নামাজের আগ পর্যন্ত। সাধারণত রাত ২ টার পর থেকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশকে
তাহাজ্জুদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় বলে মনে করা হয়। এ সময় আল্লাহ তায়ালা
অনেক নিকটবর্তী থাকে।
তাহাজ্জুদ নামাজে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে দোয়া পড়তেন
তাহাজ্জুদ নামাজের বিশ্বনবী মুহাম্মদ(সাঃ) প্রথম রাকাতে বাকারা এবং আল ইমরান সূরা
পড়তো। বিশ্বনবী (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজের সময়কে নির্দিষ্ট দোয়া করতেন যার মধ্যে
আল্লাহর প্রশংসা তার ক্ষমতা সত্যতা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়গুলো
অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিচে কয়েকটি বিশ্বনবী (সাঃ) যে দোয়া করতেন তার
কিছু অংশবিশেষ দেওয়া হল
"আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিইহিন্না ওয়া লাকাল হামদু।লাকা মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিইহিন্না।ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।ওয়া লাকালহামদু আংতাল হাক্কউ।ওয়া ওয়া'দুকাল হাক্কু"।
অর্থঃ হে আল্লাহ সব প্রশংসা আপনারই আপনি আসমান জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সবকিছু নেয়ামত এবং আপনার জন্য সব প্রশংসা আসমান জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সবকিছুর কৃতিত্ব আপনারই আপনার জন্য সব প্রশংসা আপনি আসমান জমিনে আলো
"ওয়াবিকা আমাংতা ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু।ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়ামা আখখারতু।ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা আ'লাংতা।আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখখিরু"।
অর্থঃ আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি, আপনার ওপর ভরসা করেছি।আপনি আমার পূর্বে ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিন যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছে। আপনি অগ্রগতি এবং পশ্চাদবর্তী।
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কবদির। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লা্হ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহুআকবর"।
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহি নেই তিনি এক তার কোন শরিক নেই রাজত্ব তার প্রশংসা তার এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান পবিত্র আল্লাহ সকল প্রশংসা আল্লাহর ব্যতীত কোন ইলাহী নেই এবং আল্লাহ মহান
কোন দোয়া পড়লে তাহাজ্জুদের নামাজে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় নির্দিষ্ট কোন মনের ইচ্ছা পূরণের কোন দোয়া নেই। আপনি যদি
জায়নামাজে বসে চোখের পানি ছেড়ে আপনার কষ্টের কথা,চাওয়া পাওয়ার কথা ,পাপের
কথা, কাজা নামাজের কথা, আপনি ভুল করেছেন সেটা সংশোধন চাওয়া, ইত্যাদি
বিষয়ে নামাজ শেষে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা মোনাজাতের
মাধ্যমে। এটাই দোয়া।
কিছু আলেম বলেন 'ইসমে আজম' আল্লাহ সবচেয়ে বড় নাম জানা থাকলে তা তাহাজ্জুদ নামাজের সেজদায় পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজে কিছু বিষয়ে দোয়া করতেন যা পাঠকারি উপকার হতে পারে যেমন 'আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন,। তাহাজ্জুদ নামাজের কোরআন তেলাওয়াত করা এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা অনেক আয়াত আছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি যখন দোয়া করবেন তখন পূর্ণ মনোযোগ আন্তরিকতা এবং বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে আপনি আপনার মনের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনার দোয়া কবুল হয়ে যেতে পারে।
আপনি যদি তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে জায়নামাজ এ বসে দুই হাত তুলে চোখের পানি
ফেলে আল্লাহর কাছে যা চাইবেন আল্লাহর অসীম রহমতে আপনার সব পূরণ হবে।তবে নিষ্ঠার
সাথে ভালোবাসা সাথে আল্লাহকে ডাকতে হবে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। বিভিন্ন
আলেমরা বলেছেন তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আপনি যা বলবেন আপনার সেটাই পূরণ হবে। তবে
ভালো জিনিস চাইতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ও ওয়াজিব নামাজের মতন ফরজ না।কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নামাজের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্তম ইবাদত।এ নামাজ না পড়লে আপনার গুন হবে না কিন্তু আপনি যদি নামাজ প্রতিদিন আদায় করেন তাহলে এর সওয়াব এত পরিমান বা এর ফজিলত আল্লাহ আপনাকে স্বয়ং নিজে দিবে।আপনি যদি তাহাজ্জুদের নামাজ প্রতিদিন পড়েন তাহলে আপনার মর্যাদা আল্লাহ তাআলা বাড়িয়ে দিবে।আপনার সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতে শেষভাবে ইবাদতের এক বিশেষ পন্থা। যা আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় মানসিক প্রশান্তি আছে এবং পরকালে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যায়।এটি নফল এবাদত হল এর ফজিলত অপরিসীম এবং এটি আত্মিক উন্নতি ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের পথ।
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন একটি নামাজ যা একজন বান্দা আর আল্লাহর সর্বোচ্চ
নিকটবর্তী জায়গা বা স্থান। নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের পরকালের মর্যাদা
দেওয়া হবে এবং তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পেতে পারেন।তাহাজ্জুদ
নামাজ আদায়ের মাধ্যমে রাসুল(সাঃ) এর সুন্নত অনুসরণ করা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ
গোপন সাদকাহ হিসেবে গণ্য হয়।
শেষ কথা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাকাত দোয়া ও সময়সূচী
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে আল্লাহ মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসে এবংডাকে 'আল-আমিন মোস্তাগফিরিল্লি নাগফিরল্লাহ' কার
ক্ষমা দরকার ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দিব। তাহাজ্জুদ এমন একটি নামাজ যার ফজিলত
অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এই নামাজ পড়লে আপনার মানসিক শান্তি,মর্যাদা,শয়তানের কুমন্ত্র
থেকে মুক্তি,ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ,ইচ্ছা প্রকাশ,রহমত লাভ,আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার
সুযোগ ইত্যাদি পাবেন।আল্লাহ আপনার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবে আপনাকে কারো কাছে ছোট
হতে হবে না আল্লাহর অসীম রহমত লাভ করবেন
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে জান্নাতে যেতে পারবেন। যারা জান্নাতের আশায় রাতে শেষ প্রহরে ঘুম থেকে জাগনা পেয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। এই নামাজের অনেক ফজিলত আছে যা বলে শেষ করা যাবে না তবে কোরআনে এই নামাজের কথা বারবার বলা হয়েছে আমাদের নবী করীম (সাঃ) এর উপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল কিন্তু তার উম্মতের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। এ নামাজ পড়লে গুনাহ হবে না কিন্তু আপনি যদি নামাজ প্রতিদিন পড়েন তাহলে এর সওয়াব অনেক।
এই আর্টিকেলের মধ্যে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত রাখার দোয়া সময়সূচী ফজিলত সব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা এসেছে। আপনি যদি এ নামাজ না পড়েন তাহলে আজ থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া শুরু করে দেন আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার একটি সুযোগ এই নামাজের মধ্যে। আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মতামতটি কমেন্ট বক্সে এসে জানান।ধন্যবাদ।
সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url