শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে জানব। পানি আমাদের জীবনে যে কতটা উপকার সেটা আমরা নিজে বলতে পারব না। এক কথায় বলতে পারে পানের অপর নাম জীবন। পানি না থাকলেও জীব বা মানুষ কেউ বাঁচতে পারতো না।
তাই আমাদের বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন মাফিক পানি পান করতে হবে শরীরটা সুস্থ রাখতে হলে। আর পানি হচ্ছে আল্লাহর একটি নিয়ামত। যা পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে এবং মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি করেছে। চলুন নিচে জেনে নেই শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা গুলো কি কি।
পেজ সূচিপত্রঃ শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
- শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে
- হজম প্রক্রিয়া উন্নতি করে
- টক্সিন ও বজ্র পদার্থ বের করে দেয়
- ত্বকে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে
- কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখে
- মস্তিষ্কে ও মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে
- শরীরের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- জয়েন্ট ও হাড়ের সুরক্ষা দেয়
- রক্তসঞ্চালন ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়তা করে
- FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- উপসংহার শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
মানুষের জীবনে জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান গুলোর মধ্যে পানি অন্যতম। পানির কোন
বিকল্প নাই। পৃথিবীতে প্রায় ৭০% অংশ জলে আচ্ছাদিত, আর আমাদের শরীরে প্রায়
৬০-৭০% অংশ গঠিত হয়েছে পানিতে। পানি ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। কারণ
পানি না থাকলে আমরা বাঁচতে পারব না। পানি শুধু পিপাসা মিটানোর জন্য নয় বরং
শরীরের প্রত্যেকটা কোষ, অঙ্গ, এমন কি মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রাখতে সাহায্য
করে।
আরো পড়ুনঃ
শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায়
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীরের পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন শিকার। হয়
যা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আসুন এ আর্টিকেলের মাধ্যমে
জেনে নিই শরীরের জন্য প্রাণের দশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতার সম্পর্কে
বিস্তারিত ভাবে।
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
পানি শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন ঘাম নিঃসরণ
মাধ্যমে। অতিরিক্ত যখন তাপমাত্রা পড়ে তখন আমাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়ে
যায়। এতে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে
পানি পান করি তাহলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। আবার ঘাম
ঝরার কারণে শরীর ঠান্ডা রাখে এটা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমরা যদি
পর্যাপ্ত পানি পান না খেলে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম গরমে হয় ক্লান্ত, মাথা ঘোরা বা
হিট স্ট্রোকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই গরমের দিনে বা ব্যায়াম করার পরে
আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী।
হজম প্রক্রিয়া উন্নতি করে
পানি হজমের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি খাবারকে নরম করে এবং প
পাকস্থলীতে হজমে সাহায্য করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে তারা নিয়মিত
পর্যাপ্ত পানি খেলে সহজে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। সকালে খালি পেটে এক
গ্লাস হালকা গরম পানি হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে দারুণ কার্যকর। তাই আমাদের
সকলের উচিত সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম পানি খাওয়া।
টক্সিন ও বজ্র পদার্থ বের করে দেয়
পানি শরীর থেকে বজ্র ও টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। যেমন প্রস্রাব, ঘাম
এবং মলত্যাগের মাধ্যমে শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের করে দেয়। আবার অনেক সময়
কিডনি, লিভার ও ঘামের মাধ্যমে এ ক্ষতিকর পদার্থ গুলো শরীরের বাইরে চলে যায়। তাই
পর্যাপ্ত পানি না খেলে টক্সিন জমে শরীরে বিষক্রিয়া ব্রণ, ত্বকের
সমস্যা ও কিডনি জটিলতা হতে পারে। তাই আমাদের সকলের প্রতিদিন অন্তত ৮-১০
গ্লাস পানি পান করা অভ্যাস করা উচিত।
ত্বকে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে
সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং চুলের জন্য পানি অপরিহার্য। আমরা যদি প্রতিদিন
নিয়ম করে পানি খায় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বক দুটোই ভালো থাকবে। যেমন ধরেন
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে অজুর পানিটা কিন্তু পরিষ্কার। যে পরিষ্কার
পানি দিয়ে প্রতিদিন মুখ ধুলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। তাই
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও নমনীয়তা অধিকাংশ নির্ভর করে শরীরে পানির পরিমাণের ওপর।
কব্যাপ্ত পানি খেলে ত্বক আর্দ্র থাকে, শুষ্কতা কমে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বজায়
থাকে। যারা চুলকানি বা ফাটা ত্বকের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য পানি এক প্রাকৃতিক
ওষুধের মতন কাজ করে। এ ছাড়া পানির রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ত্বকের কোষে পুষ্টি সরবরাহ
করে।
কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখে
কিডনির প্রধান কাজ হল শরীরের বজ্র ফিল্টার করা। আর এ কাজটা করার জন্য পানি কোন
বিকল্প নাই। কিডনির দক্ষতার সাথে কাজ করতে সাহায্য করে এবং কিডনির পাথরের
প্রতিরোধের সহায়তা করে পানি। আমরা যদি পর্যাপ্ত পানি না খেলে কিডনিতে
পাথর, সংক্রমন বা প্রদাহকে ঝুঁকি বাড়ে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে
পানি পান করলে কিডনির কাজ সহজ হয় এবং প্রসাবের মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে
যায়।
মস্তিষ্কের ও মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে
পানির অভাবে অনেক সময় মাথাব্যথা, মনোযোগের ঘাটতি, এমনকি মানসিক অস্থিরতা দেখা
দিতে পারে। এটি মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে পানি।
মস্তিষ্কে প্রায় ৭৫% পানি থাকে। তাই ডিহাইড্রেশন হলে মস্তিষ্কের কার্যক্রম
ব্যাহিত হয়। পরিমাণ মতো পানি খেলে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও মানসিক
স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। রাখতে পানি খাওয়ার অভ্যাস রাখুন।
শরীরের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পানি আমাদের জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পানি পান না করলে মানুষ বেঁচে থাকতে
পারে না। শুধু মানুষ নয় প্রাণী জীব সবারই প্রাণের প্রয়োজন। পানি খেলে আমাদের
শরীরের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা ও বৃদ্ধি পায়। তাই তো পানিকে বলা হয়েছে পানির
অপর নাম জীবন। তাই আমাদের সুস্থভাবে বাঁচতে হলে অবশ্যই আমাদের পরিমাণ মতো পানি
খাওয়া দরকার।
আরো পড়ুনঃ
সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
অনেক সময় দেখা যায় পানির অভাবে শরীরে দ্রুত ক্লান্তি হয়ে যায় এবং শরীরের
ঘাটতি দেখা দেয়। পানি শরীরের কোষ গুলোতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়। যা
শক্তির উৎপাদনে সাহায্য করে। যারা ব্যায়াম করেন বা সারাদিন কাজের চাপ সামলান
তাদের জন্য পরিমাণ মতো পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু শরীরকে
হাইড্রেট রাখেনা বরণ কর্মক্ষমতাও বাড়ায়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে পানি এক অসাধারণ উপায়। গবেষণায় দেখা গেছে খাবারের আগে পানি খেলে
ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার রোধ হয়। এছাড়া পানি মেটাবলিজম বাড়িয়ে
ফ্যাট বার্নে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানি খেলে শরীরকে সেটা গরম করতে শক্তি খরচ করতে
হয় ফলে ক্যালরি পড়ে বেশি তাই ডায়েট প্ল্যানে পানি একটি অপরিহার্য উপাদান।
জয়েন্ট ও হাড়ের সুরক্ষা দেয়
আমাদের জয়েন্ট এ বাসন্তী অংশগুলোতে তরল পদার্থ থাকে যা ঘর্ষণ কমায়। পানি
আমাদের জয়েন্ট গুলোতে লুব্রিকেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং কুশন সরবরাহ করে। এ
তরল পদার্থ অন্যতম উপাদান হলো পানি। পর্যাপ্ত পানি পান করলেল
লুব্রিকেশন বজায় থাকে ফলে ব্যথা বা ক্র্যাম্পের ঝুঁকি কমে যায়। যারা
নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের পানির চাহিদা আরো বেশি কারণ ঘামের মধ্যে শরীরে অনেক
পানি হারায়।
রক্তসঞ্চালন ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সহায়তা করে
শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতার মধ্যে হচ্ছে রক্ত সঞ্চালন।রক্তে
প্রায় অর্ধেক পানিযুক্ত প্লাজমা দিয়ে গঠিত। তাই শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে
রক্ত ঘন হয়ে যায় যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদ যন্ত্রের অতিরিক্ত
চাপ বাড়ে। পানি রক্তে তরলতা বজায় রাখে অক্সিজেন ও পুষ্টি পুরো শরীরে পৌঁছে দেই।
এজন্য হৃদরোগ প্রতিরোধের পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ জল কি?
উত্তরঃ জল হল একটি স্বচ্ছ, বর্ণহীন ও স্বাদহীন তরল পদার্থ যা জীবন ধারণের জন্য
অপরিহার্য। এটি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সংমিশ্রণ।
প্রশ্নঃ মানবদেহের জন্য পানি কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ জীবনের বেঁচে থাকতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের জন্য এবং শরীর ও স্বাস্থ্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, শরীরের গঠন ভালো রাখার জন্য মানবদেহের পানির প্রয়োজন অপরিসীম।
প্রশ্নঃ পানির প্রধান উৎস কি?
উত্তরঃ পানির প্রধান উৎস হল বৃষ্টি, নদী, হ্রদ, ঝরনা,ভূগর্ভস্থ পানি ও
সমুদ্র। এ প্রাকৃতিক উৎসগুলো থেকে মানুষ দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য প্রাণে সংগ্রহ
করে।
প্রশ্নঃ দেহে পানি কি রূপে কাজ করে?
উত্তরঃ দেহের পানি রক্ত, কোষ ও টিস্যুর মধ্যে তরল মাধ্যমে হিসেবে কাজ করে।
এটি পুষ্টি পরিবহন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও বজ্র অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
প্রশ্নঃ বিড়াল বেশি পানি খায় কেন?
উত্তরঃ বিড়াল বেশি পানি খায় কারণ তার শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও হজম
প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পানির প্রয়োজন। আবহাওয়া শরীর ঠান্ডা রাখতেছে বেশি পানি
পান করে।
উপসংহার শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
পানি আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। আমাদের
প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।
তবে এই পরিমাণ নির্ভর করে বয়স, ওজন, কাজের ধরন এবং আবহাওয়ার উপরে। তাই আমাদের
কিছু নিয়ম মানতে হবে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার যেমন সকালে ঘুম
থেকে উঠে পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, খাবারের ৩০ মিনিট আগে পানি পান করতে হবে
, অতিরক্ত ঠান্ডা পানি খালি পেটে না খাওয়াই ভালো এবং গরমের সময় ব্যায়ামের পরে
বেশি করে পানি পান করা।
এ আর্টিকেলে শরীরের জন্য পানির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা উপরে আলোচনা করেছি এবং
কি কি নিয়ম পালন করলে আপনার শরীরের জন্য ভালো হবে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে
ধরেছে। এ সম্পর্কে আপনার যদি আর কোন কিছু জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট
বক্সে জানাতে পারেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url