শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায়

শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে জানব। গরমকাল চলে যাচ্ছে সামনে শীতকাল। শীতকাল আসলে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়। সে সাথে ত্বক শুষ্ক রুক্ষ ও আদ্রতা ভাব চলে আসে। ত্বক কেমন খচখসে হয়ে যায় চামড়া জুরিজুরি হয়ে যায়। দেখতে ভালো লাগে না।

শীতকালে-ত্বকের- যত্নের-৮টি- প্রাকৃতিক

তাই আমাদের সকলের উচিত শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া। আমরা যদি একটু নিয়ম ফলো করে চলি তাহলে আমাদের ত্বক শীতকালে থাকবে নরম মসৃণ ও কোমল। আসুন তাহলে এর আর্টিকেলে মাধ্যমে জেনে নেই শীতকালে প্রাকৃতিক উপায়ে ৮ টি সমাধানের মাধ্যমে কিভাবে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায়

শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায়

শীতকাল আসলে বাংলাদেশে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়। আবহাওয়া এতটা পরিবর্তন হয়েছে শীত কালা আমাদের ত্বক শুষ্কতা ও রুক্ষতা হয়ে যায়। শীতকালে শুধু ত্বক শুষ্কতা হয় তা না তার সাথে সাথে পা ফাটা ঠোঁট ফাটা হাত-পা খসখসে হয়ে যায়। দেখতে অনেকটা বয়স্ক ছাপ লাগে। শীতকালে আবহাওয়ার কারণে ঠোঁট ফেটে অনেক সময় রক্ত বের হয়।

আবার অনেকে আছে বাজার থেকে কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট নিয়ে এসে ব্যবহার করে স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় না। স্থায়ীভাবে ত্বকের সমাধান নিতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রাকৃতিক উপায়গুলো ব্যবহার করা জরুরী। যাতে করে ত্বক থাকে নরম কোমল ও মসৃণ। তাই আমাদের বাইরের কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নিলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাই আসুন জেনে নিন শীতকালে ত্বকের যত্নে আটটি প্রাকৃতিক উপায় গুলোর সম্পর্কে।

মধু দিয়ে ত্বকের যত্ন

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান। আমরা সবাই মধুকে চিনি। মধু শুধু খাবার খেলে স্বাস্থ্যের উপকারিতা হয়  এমনও না সে সাথে ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা অপরিসীম। ঘরোয়া পদ্ধতিতে মধুর মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। এক কথায় বলতে পারেন মধু হলো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এটি ত্বকের গভীরে গিয়ে আদ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে।

  • প্রতিদিন মুখে একটা পাতলা স্তরে মধুর লাগে ১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঠোঁট ভালো রাখতে প্রতিদিন ঠোঁটে রাতে মধু লাগে ঠোঁট ফাটা বন্ধ করুন।
  • প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হয়।
  • প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে মধু।
  • ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ফাটা ঠোঁট মসৃণ হয়।

নারিকেলের তেল দিয়ে ত্বক নরম রাখা

শীতের সময় আমাদের ত্বক অনেক রুক্ষ ও শুষ্কতা দেখায়। অনেক সময় আমাদের ত্বক রুক্ষতার আকার ধারণ করে। শীতকালে নারিকেল তেল একটি দারুন প্রাকৃতিক সমাধান। এতে থাকা ফ্যাট অ্যাসিড ত্বকের গভীরে গিয়ে পুষ্টি যোগায়। এবং ত্বককে ভিতর থেকে নরম রাখে। গোসলের পরে বা ঘুমানোর আগে ত্বকে হালকা গরম নারিকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন।

আরো পড়ুনঃ কালো ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

হাত পা, মুখ ও ঠোঁটের সমান ভাবে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার হাত পা এবং ঠোঁট নরম থাকবে।ত্বক মোলায়েম ও উজ্জ্বল হবে।চুলকানি, ফাটা ত্বক ও র‍্যাশ দূর হবে। এবং কালচে ভাব কমায় ঠোঁটের।

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা ত্বকে

অ্যালোভেরা এটা একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটাকে কমবেশি আমরা সবাই চিনে থাকি এবং আমরা এটা ছাদের উপরের টবে চাষ করি। কিন্তু অ্যালোভেরা জেল আমাদের যে এত উপকার করে এটা অনেকে জানেই না। অ্যালোভেরা হল প্রাকৃতিক অন্যতম সেরা ত্বক সুরক্ষাকারী উপাদান। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকে ভিতর থেকে পুষ্টি দেয়।

  • ফেস এলোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে মুখে লাগান।
  • ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলন।
  • আপনি চাইলে এলোভেরা জেল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • ত্বকের লালচে ভাব ও জ্বালাপোড়া দূর করে।
  • ত্বককে হাইড্রেট রাখে।
  • ব্রণ ও র‍্যাশ প্রতিরোধে সহায়ক।

দুধ ও হলুদের প্যাক তৈরি করা

দুধ ও হলুদ এই দুটি উপাদান কে না চিনে। এই দুইটি উপাদান হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে এ দুইটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এ দুটি প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই দুধ ও হলুদ একসাথে একটি প্যাক তৈরি করলে আমাদের শীতকালে ত্বকের জন্য অনেক উপকার একটি উপাদান হবে।

দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। অন্যদিকে হলুদ ত্বকের জীবাণুমুক্ত ও উজ্জ্বল রাখে। আমরা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে শীতকালে এই দুটি উপাদান ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ত্বক হবে উজ্জ্বল ও কমল।

  • এক চামচ কাঁচা দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন।
  • মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট ধরে রেখে তারপরে ধুয়ে ফেলুন।
  • সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে দারুন ফল পাবেন।
  • এতে আপনার ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
  • শীতের রুক্ষ ভাব দূর হয় ত্বকের।
  • দাগ, ব্রণ ও পিগমেন্টেশন কমায়।

শশা ও লেবুর রসের মিশ্রণ

শসা ও লেবু হচ্ছে একটা প্রাকৃতিক উপাদান. আল্লাহর প্রদত্ত সৃষ্টি। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। শসা ত্বক ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। আর লেবুর রস ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। শশা ও লেবুর রস এটি সরাসরি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর লেবুর রস ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ব্রনের দাগ কমাতে সাহায্য করে। সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি লেবুর রস ব্যবহার না করাই ভালো। ব্যবহারের পূর্বে সূর্যের আলোতে যাওয়ার এড়িয়ে চলুন।

এক চামচা শসার রস ও আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তুলা দিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। রোদের পোড়া দাগ ও ত্বকের কালচে ভাব কমায়। তৈলাক্ত ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করে।

বাদামে তেল দিয়ে ম্যাসাজ

বাদাম তো আমরা সবাই খাই। বাদাম হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান। কিন্তু বাদাম শুধু খাবারের জন্য না। বাদামে তেল যে আমাদের ত্বকের জন্য কতটা কার্যকরী তা আমরা জানিনা। বাদামের তেলে রয়েছে ভিটামিন ই। যার ত্বকের কোষের পূর্ণ গঠন করে এবং বয়সের ছাপ কমায়।

  • ঘুমানোর আগে হালকা গরম বাদাম তেল মুখে ও গলায় ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন বা সারারাত রেখে দেন।
  • বাদামে তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে তা গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজার হয়।
  • ত্বকের বলিরেখা ও ডার্ক সার্কেল কমায়।
  • ত্বক নরম উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে।

পর্যাপ্ত পানি পান ও স্বাস্থ্যকর খাবার

পানির অপর নাম জীবন।এই কথাটা আমরা সবাই মানি। পানি না খেলে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে গরম কালে যত পানি খায় শীতকালে আমরা ততটা পানি খাই না। চিতেও অনেকে পানি কম পান করলে ফলে শরীরের ভেতরে আদ্রতা কমে যায়। এতে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই আমাদের শীত বা গরমকাল সবসময় বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া ভালো।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে চুলের খুশকি দূর করা যায়

  • দিনে অন্তত ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
  • নিয়মিত ফলমূল ও সবজি খান যেমন কলা পেঁপে কমলা গাজর ইত্যাদি।
  • বাদাম মাছ ও ডিম খেলে ত্বকে পুষ্টি পায়।
  • নিয়মিত আপনি পানি আর স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ভেতর থেকে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। ত্বকের বিষাক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে পানি। মুখের প্রাকৃতিক গ্লো ফিরে আসে।

ঘুম ও মানসিক প্রশান্তির গুরুত্ব

আমাদের জীবনের সবথেকে বেশি প্রবলেম হচ্ছে মানসিক অশান্তি। যার কারণে মানুষ রাতে ঠিকমতন ঘুমাতে পারে না। মানসিক অশান্তির কারণে চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি শারীরিকভাবে স্বাস্থ্য দিন দিন দুর্বল হয়ে বিভিন্ন রোগের বাসা বাঁধে। তাই আমাদের ঘুম এবং মানসিক অশান্তি জীবন থেকে কমাতে হবে। অনেক সময় ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপে ত্বকের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

  • আমাদের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘুমানো উচিত।
  • ঘুমানোর আগে ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম করুন মানসিক প্রশান্তির জন্য।
  • ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে হালকা তেল বা ময়েশ্চারাইজার লাগান।

FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ ত্বকের যত্নে কি কি করা উচিত?

উত্তরঃ ত্বকের যত্নে নিয়মিত ভাবে মুখ পরিষ্কার, ময়েশ্চারাইজার, ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সাথে পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ত্বকের ভেতর থেকে সুন্দর রাখে।

প্রশ্নঃ শীতকালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ করার উপায় কি?

উত্তরঃ শীতকালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ করতে প্রতিদিন মধু, নারিকেল তেল বা ভ্যাসেলিন ঠোটে লাগান। সাথে প্রচুর পানি পান করুন ও ঠোঁট চাটা থেকে বিরত থাকুন এগুলো ঠোঁটের আদ্র ও নরম করে।

প্রশ্নঃ শীতকালে পা ফাটা ও ত্বক  খসখসে রোধ করার উপায় কি?

উত্তরঃ শীতকালে পা ফাটা ও ত্বক খসখসে রোধ করতে প্রতিদিন গরম পানিতে পা ভিজে হালকা ঘষা মরা চামড়া তুলে ফেলুন, তারপর নারিকেলের তেল গ্লিসারিন লেবুর মিশ্রণ লাগান। রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে মোজা পড়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

শেষ কথা শীতকালে ত্বকের যত্নের ৮টি প্রাকৃতিক উপায়

শীতকালে ত্বকের যত্ন নেয়া আমাদের সকলেরই উচিত। গরমকালে যতটা আমরা ত্বকের যত্ন শীতকালে সেভাবে আমরা ত্বকের যত্ন নিতে পারি না। কারণ শীতকালে ঠান্ডার কারণে পোশাক গা থেকে খুলতে চায় না। কিন্তু শীতকালে আমাদের ত্বক বেশি রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত শীতকালে ত্বকের যত্ন নেয়া যাতে করে ত্বক কমল মসৃণ ও নরম থাকে। তবে বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো।

বাইরে যাওয়ার সময় ছাতা, টুপি বা হাত মোজা লাগে বাইরে যাওয়া ভালো। যাতে করে তোকে ধুলাবালি না লাগে। কারণ তোকে ধুলাবালি লাগলে তা ত্বক ফেটে যায়। আর্টিকেলটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে আপনি কিভাবে শীতকালে যত্ন নেবেন তার ৮টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনার পড়ে যদি উপকারে আসে তাহলে আপনার মতামতি কমেন্ট বক্সে জানান ধন্যবাদ। আর এরকম নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url