খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা এবং অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা অনেক। খেজুর শুধু খেতে সুস্বাদু নয় এটি স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে অনেক উপকারী। খেজুর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য সুপার ফুড হিসাবে কাজ করে। খেজুর এমন খাবার যা শরীরের যত্নের নিতে যার উপর সারা বছর মানুষ ভরসা করতে পারে।

খেজুর-খাওয়ার-স্বাস্থ্যের-১৪টি-উপকারিতা

স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমাদের ফল খাওয়া উচিত। তার মধ্যে পুষ্টি উপাদান ফল হচ্ছে খেজুর। এ আর্টিকেলে জানবো খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী এবং তার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আর সেই সাথে জানবো অতিরক্ত খেজুর খেলে স্বাস্থ্যের কি ক্ষতি হয় অপকারিতা সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা এবং অপকারিতা

খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা সম্পর্কে

খেজুর আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ফল। তবে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ফল খাওয়া আমাদের সকলেরই উচিত। খেজুর এমন একটি ফল যা প্রাচীনকাল থেকে মানুষের প্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিতি। এটি শুধু ইসলামের সংস্কৃতিতে নয় বরং বিশ্বজুড়ে পুষ্টিকর ফল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। খেজুর এমন একটা ফল যার পুষ্টিগুণ এতটাই রয়েছে যে আমাদের স্বাস্থ্যের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। মরুভূমিতে দেশগুলোতে খেজুর কে বলা হয় প্রাকৃতিক মিষ্টি শক্তি।

কারণ এতে থাকা প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার অন্যান্য সমন্বয়। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে খেজুর শরীরের প্রাণশক্তি যোগায় হজম শক্তি উন্নত করে ও সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। জেনে নিই প্রতিদিন খেজুর খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের আর কি কি উপকারিতা রয়েছে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জেনে নিন।

  • শরীরের শক্তি ও এনার্জি বৃদ্ধিঃ খেজুরের প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ থাকার কারণে এটি দ্রুত শক্তি যোগায়। শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে। বিশেষ করে সকালে বা বিকেলে নাস্তা কয়েকটি খেজুর খেলে তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়।
  • হজম শক্তি উন্নতি করেঃ খেজুরের ফাইবার সমৃদ্ধ হয় এটি প্রাচীনতন্ত্রের জন্য খুবই সহায়ক। যদি প্রতিদিন নিয়ম করে খেজুর খাওয়া হয় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেট পরিষ্কার থাকে। হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলতে সাহায্য করে ফলে শরীরের টক্সিন বা বিষাক্ত গ্যাস জমে না।
  • হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষাঃ খেজুরে থাকা পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হৃদযন্ত্রকে সবল রাখে। খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে হলে হৃদরোগে ঝুঁকি কমে যায়।
  • রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ খেজুরের প্রাকৃতিক আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। যার রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যারা অ্যানিমিয়াম ভোগেন, তারা প্রতিদিন কয়েকটা খেজুর খেলে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বাড়ে ও দুর্বলতা কমে।
  • হাড়কে শক্ত করেঃ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান। এগুলো হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। আপনি যদি নিয়ম করে প্রতিদিন খেজুর খান তাহলে হাড় মজবুত থাকে এবং জয়েন্টের ব্যথা কমে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ভিটামিন বি৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের নার্ভ সেলের কার্যক্ষমতা উন্নতি করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এমন মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয় এবং মানসিক চাপ কমে যায়।
  • গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারীঃ খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান মা ও শিশুর পুষ্টির সরবরাহ সহায়তা করে। প্রসাবের সময় শক্তি যোগাতে এটি নিরাপদ ও কার্যকর একটি খাবার হিসেবে পরিচিতি।
  • ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করাঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে। খেজুর খেলে শরীরের টক্সিন দূর হয় হলে ত্বকের ফুসকুড়ি বা ব্রণ কমে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের গঠন মজবুত করে ও চুল পড়ে যাওয়া অনেকটাই কমে যায়।
  • ওজন বাড়াতে সহায়তা করেঃ যারা ওজন কম নিয়ে সমস্যায় আছেন তাদের জন্য খেজুর হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে থাকা প্রাকৃতিক ক্যালোরি ও কার্বনহাইড্রেট শরীরের বাড়তি শক্তি যোগায়। প্রতিদিন দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে ওজন স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
  • রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়ঃ খেজুরে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফেনলিক যৌগ। যা শরীরের কোষকে সুরক্ষা দেয়। আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় থাকে ও সংক্রমন প্রতিরোধ সহায়তা করে।
  • জনশক্তি বৃদ্ধি করেঃ খেজুর প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় প্রাকৃতিক শক্তিবোধক হিসাবে পরিচিতি। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও খনিজ উপাদান শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে দাম্পত্য জীবনে উদ্যম বজায় রাখে।
  • নার্ভ শান্ত রাখে ও ঘুম ভালো হয়ঃ মেগনেসিয়াম ও ট্রিপটোফ্যান ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। খেজুর খেলে স্নায়ুতন্ত্র প্রশমিত হয়, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে যায়।
  • কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখেঃ প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। শরীরের জল ও লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে যা কিডনি সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • চোখের দৃষ্টি রক্ষা করেঃ খেজুরে থাকা ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন চোখের রেটিনা শক্তিশালী রাখে। নিয়মিত খেলে দৃষ্টি শক্তি তীক্ষ্ণ হয় এবার রাতকানা সমস্যা দূরে হয়। 

খেজুর খাওয়ার  ৪টি অপকারিতা সম্পর্কে

খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। এখন জানবো অতিরিক্ত খেজুর খেলে তার কি অপকারিতা হয় স্বাস্থ্যের। অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো নয়। খাবারের দিক দিয়েও তেমনি। খেজুর যতটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারে খাবার কিন্তু অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণ মতন খাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন অতিরিক্ত খেজুর খেলে স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি হবে তা জেনে নিন।

  • ওজন বেড়ে যাবেঃ খেজুরের প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালরের পরিমাণ বেশি। তাই একসাথে বেশি খেলে শরীরে ফ্যাট জমে যেতে পারে। বিশেষ করে যারা খুব কম শারীরিক পরিশ্রম করেন।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতাঃ খেজুরে থাকাগুলো কোচ রক্তের দ্রুত শর্করা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। কারণ খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত খেলে নিরাপদ নয়।
  • দাঁতের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাঃ অতিরিক্ত মিষ্টি থাকার কারণে দাঁতের এনামেল দুর্বল হতে পারে। খাওয়ার পরে মুখ পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁতে ব্যথা বা ক্ষয় হতে পারে।
  • পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারেঃ অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণে গ্যাস, অম্লতা এবং পেট ফাঁপা মত অনুভব হতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন পরিমাণের মাত্রায় বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে এসব সমস্যা হতে পারে।

খেজুরের পরিচয়

খেজুর ইংরেজিতে Date palm, যার বৈজ্ঞানিক নাম phoenix dactylifera হল এক ধরনের মিষ্টি ফল যা খেজুর গাছে ধরে। এটি পাম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি চির সবুজ গাছ। খেজুরের প্রধানত মরুভূমি অঞ্চলে ফল হল বর্তমানে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে চাষ হচ্ছে। খেজুরের গাছ দেখতে খেজুর পাতার মতন লম্বা ও সরু কাণ্ড বৈশিষ্ট। এটি সাধারণত ২০-২৫ মিটার লম্বা পর্যন্ত হতে পারে। গাছের গায়ে কোন শাখা নেই, উপরের পাতা ঝাড় থাকে এবং পাতার গোড়া থেকে ফুল ও ফল ধরে।

আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুরের আদি উৎপত্তি মধ্যপ্রাচের দেশ ইরাক ও প্যারিস অঞ্চলে। ধারণা করা যায়, প্রায় ৫০০০ বছরের বেশি আগে মানুষ প্রথমে খেজুর গাছ চাষ শুরু করেছিল। পরবর্তীতে এটি আরব দেশ, মিশর, ইরান, সৌদি আরব, ওমান, কাতাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে খেজুরের  প্রায় ৩০টির বেশি দেশে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৌদি আরব, ইরান, মিশর, আলজেরিয়া, পাকিস্তান, টিউনেশিয়া, মরক্কো এবং বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের খেজুর গাছ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে। বিশেষ করে যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলাগুলোতে খেজুরের গাছ প্রচুর পরিমাণ জন্মে। শীতকালে এখানকার মানুষ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুট তৈরি করে যা খেজুরের গুড় নামে বিখ্যাত।

খেজুর গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।গাছটি  একবীজপত্রী উদ্ভিদ। শিকড় মজবুত এবং মাটির গভীরে প্রবেশ করে। কান্ড শক্ত, পত্র ঝারে ঢাকা। পাতাগুলো লম্বা, সূচালো ও পাখার মতন ছড়ানো। ফুল ও ফল গুচ্ছ আকারে ধরে। খেজুর গাছে দ্বিবীজপত্রী অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ গাছ আলাদা হয়। পুরুষ গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুলের পরাগ তৈরি হয়। এ গাছ থেকে ফল হয় না। এর কাজ হল স্ত্রী গাছকে পরাগায়ন করা।

স্ত্রী গাছে ফুলের ফল ধারণ ক্ষমতা থাকে। পরাহায়নের পর খেজুর ফল উৎপন্ন হয়। এক একটি স্ত্রীর গাছ বছরে বহু কেজি খেজুর ফল দেই। সাধারণভাবে প্রতি ১০ টি খেজুর গাছে একটি পুরুষ গাছ থাকা প্রয়োজন যাতে সব গাছ সঠিকভাবে পরাগায়িত হয়। অর্থাৎ নয়টি স্ত্রী একটি পুরুষ গাছ রাখা উত্তম চাষের অনুপাত।একটি খেজুর গাছে সাধারণত ৭০-১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে ফল ধরতে শুরু করে ৪-৫ বছর বয়সে। পূর্ণ উৎপাদন কাল থাকে প্রায় ৩০-৪০ বছর।

খেজুরের ফলন অনেকটা নির্ভর করে মাটি, পরিবেশ, জাত ও যত্নের উপর। ভালো জাতের ও যত্ন নিয়ে স্ত্রী গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৬০-১০০ কেজি পর্যন্ত খেজুর ফল পাওয়া যায়। কখনো কখনো উন্নত জাতের গাছ যেমন আজওয়া, মেদজুল এবং দেগলেট নুর থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত ফলও হতে পারে। বাংলাদেশের স্থানীয় যাতে খেজুর গাছে সাধারণত ৩০-৫০ কেজি ফল উৎপন্ন হয়।

বাংলাদেশের শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। জমে এরপর সেটির জ্বালিয়ে গুড় বানানো হয়। এর গাছ থেকে এক মৌসুমে ৩০-৪০ লিটার পর্যন্ত রস পাওয়া যায়।। এরস থেকে তৈরি গুড় স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়।বিশেষ করে যত ঘর ও খুলনা অঞ্চলের খেজুরের গুড় সারাদেশে বিখ্যাত। খেজুর চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ  মাটি হতে হবে দোআঁশ বা বেলে দোআশ মাটি। রোদ যুক্ত উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু সবচেয়ে ভালো। বীজ বা চারা রোপণের সময় বর্ষাকালের শেষের দিকে উত্তম। একবার গোবর সার ও পানি সরবরাহ গাছের দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

খেজুরের পুষ্টিগুণ ও উপাদান

প্রতি ১ মাঝারি আকারে খেজুরের গড়ে কত পুষ্টিগুণ ও উপাদান এবং পরিমাণ রয়েছে তা জানবো। ক্যালোরি ২০-২৫, কার্বোহাইড্রেট ৫.৫-৬ গ্রাম, ফাইবার ০.৬ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.০৩ গ্রাম, প্রাকৃতিক চিনি ৪.৫-৫ গ্রাম, পটাশিয়াম ৫০-৬০ মি.গ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ৫-৬ মি.গ্রা, ক্যালসিয়াম ১৫ মি গ্রা, আয়রন ০.১ মি গ্রা, ফসফরাস ১০ মি.গ্রা, সোডিয়াম ১ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.০২ মি.গ্রা, ভিটামিন এ ২IU এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অল্প পরিমাণ।

ইসলামের দৃষ্টিতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

ইসলামের দৃষ্টিতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে এটি একটি বরকতময় ফল হিসাবে পরিচিতি। খেজুর কেবল একটি পুষ্টিকর ফল নয় বরং এটি ইসলামের জীবনের নানার দিকে সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খেজুর কে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। বহু হাদিসে উল্লেখ আছে, তিনি রোজা ভাঙতেন খেজুর ও পানির মাধ্যমে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী " যখন তোমাদের কেউ ইফতার করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে কারণ খেজুর বরকতময়। আর যদি খেজুর না পায় তবে পানি দিয়ে ইফতার করুক কারণ তা পবিত্র"।

এ থেকে বোঝা যায় খেজুর শুধু খাবার নয় বরণ এটি একটি সুন্নত ও বরকতময় খাদ্য। খেজুরের প্রাকৃতিক চিনি যেমন গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ রয়েছে যা শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। ইসলামে ইফতারের সময় প্রথমে খেজুর খাওয়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এর অন্যতম কারণ হলো শরীরকে ধীরে ধীরে খাদ্য গ্রহণের উপযোগী করে তোলে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন," যে ঘরে খেজুর নেই, সে ঘর মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে"। খেজুর এমন এক খাদ্য যা ঘরে থাকলে সেখানে অভাব অনুভুতে হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে খেজুর একটি বরকতপূর্ণ খাদ্য যা দারিদ্র ও অনাহার দূর করতে সাহায্য করে।

নবজাতকের জন্মের পর তার মুখে জীবন ও খেজুর লাগানোর প্রথা ইসলামের সুন্নত হিসাবে রয়েছে। রাসূল (সাঃ) হযরত আনাস (রাঃ) এর পুত্রের জন্মের পরে খেজুর চিবিয়ে শিশুর মুখে লাগিয়ে ছিলেন। এ প্রথার মাধ্যমে শিশুর জীবনে প্রথম বরকত ময় খাদ্য প্রবেশ করে এবং এটি শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার। ইসলামী চিকিৎসা ও প্রাচীন আরব বিজ্ঞানীদের মতে খেজুর মস্তিষ্কের কার্য করতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক শান্তি আনে। এটি মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে যা নামাজ, দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে একাগ্রত বৃদ্ধি করে।

খেজুর খাওয়ার সেরা সময়

উপরের আলোচনায় জানলাম ইসলামের দৃষ্টিতে খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা সম্পর্কে।খেজুর খাওয়া সেরা সময় নির্ভর করে শরীরের প্রয়োজন, হজমের ক্ষমতা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর। তবে ইসলামিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্দিষ্ট সময় খেজুর খাওয়া সবচেয়ে উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। চলুন নিচের বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন খেজুর খাওয়া সেরা সময়গুলো।

আরো পড়ুনঃ খেজুরের রস খাওয়ার ১০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে

  • সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া অনেক ভালো। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ২-৩ খেজুর খাওয়ার সবচেয়ে উপকারী। এতে হজমের উন্নতি হয় এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত সকালে খেজুর খান তাহলে গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ও দুর্বলতা দূর হয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খেলেছে দিনে কোন বিষ বা জাদু তার ক্ষতি করতে পারবেনা। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে সকালে খেজুর খাওয়া অত্যন্ত কল্যাণকর ও সুরক্ষা মুলক।
  • রোজা ইফতারের সময় প্রথমে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙ্গা সুন্নত। এতে করে আপনার রোজা রাখার কারণে দীর্ঘক্ষণ উপবাসের পর শরীরের শক্তির ঘাটতি তৈরি হয় যা খেজুর মুহূর্তে পূরণ করে। শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে এটি সহায়তা করে বিশেষ করে খেজুরের সঙ্গে পানি খেলে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা খেজুর দিয়ে ইফতার করো কারণ এতে বরকত আছে।
  • দুপুরে বিকালের দিকে শরীর কিছুটা ক্লান্ত বোধ করলে খেজুর খাওয়া দারুন উপকারী। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরকে তাজা রাখে। এটি চা বা কফির চেয়ে বেশি শক্তি দেয় কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া নেই। যারা অফিসে বা পড়াশোনা ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য বিকেলে ২-৩ টি খেজুর দারুন এনার্জি বুস্টার।
  • খেজুরে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ঘুমের মান উন্নতি করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রাতে হজমজনিত সমস্যা কমায় তাই রাতে ঘুমানোর আগে ১-২ দুইটি খেজুর খাওয়া ভালো।
  • গর্ভবতী নারীরা সকালে দুপুরে খেজুর খেলে উপকার পাবে। খেজুর খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। প্রসাবের সময় শক্তি দেয় ও রক্ত ক্ষরণ কমায়। কোরআনে হযরত মারইয়াম (আঃ) এর ঘটনা তে আল্লাহ খেজুর খেতে বলেছেন প্রসাবের সময়।
  • খেজুর খাওয়ার আরেকটি সেরা সময় হচ্ছে ব্যায়াম বা পরিশ্রমের আগে। আপনার কাজ শুরু করার বা আপনি ব্যায়াম করবেন তার কিছুক্ষণ আগে যদি আপনি২-৩ খেজুর খেয়ে নিন তাহলে আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকার হবে।

FAQ: প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ কলা ও খেজুর একসাথে খেলে কি হয়?

উত্তরঃ কলা ও খেজুর দুটোই প্রাকৃতিক উপাদান। এই দুটো খাবার স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিতে ভরপুর। তাই এ দুটো খাবার একসাথে খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হিসাবে কাজ করবে।

 প্রশ্নঃ খেজুর ও ফল একসাথে খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, খেজুর ও অন্যান্য ফল একসাথে খাওয়া যাবে। এতে করে শরীরে ভিটামিন  খনিজের ভারসাম্য বজায় থাকে। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত খাবেন না। অতিরিক্ত খেলে রক্তের  শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

প্রশ্নঃ খেজুর না কালো কিসমিস কোনটা ভালো?

উত্তরঃ খেজুর ও কালো কিসমিস দুটোই পুষ্টিকর তবে রোজা বা দ্রুত শক্তির জন্য খেজুর বেশি উপকারী। কালো কিসমিস হজমে ভালো ও আয়রন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই দুটির আলাদা উপকারিতা আছে।

উপসংহার খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা এবং অপকারিতা

খেজুর এমন এক প্রাকৃতিক খাদ্য যা শরীর মন ও ত্বককে সব ক্ষেত্রে উপকারী। তাই আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন এক থেকে দুইটা হল খেজুর খাওয়া উত্তম। কারণ খেজুর আমাদের দেহের ক্ষয় রোধ থেকে যাবতীয় অঙ্গ পতঙ্গের উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই সকলের খেজুর খাওয়া ভালো।

এ আর্টিকেলে উপরে খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যের ১৪টি উপকারিতা এবং অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি নিজেকে ভালো রাখতে চান তাহলে আজ থেকে খেজুর খাওয়া শুরু করেন। এ আর্টিকেলটা পড়ে আপনার যদি উপকার হয় তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। এবং এরকম তথ্যমূলক স্বাস্থ্যের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামিজা৪২ কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url